মাযহাব ও এর শরয়ী ফায়সালা

মাযহাব ও এর শরয়ী ফায়সালা

আল্লাহ পাক তাঁর কালামে পাকে ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমারা আল্লাহ পাক-এর ইতায়াত (অনুসরণ) করো এবং আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছে তাঁদের ইতায়াত করোঅতঃপর যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে প্রত্যাবর্তন করোঅর্থাৎ যেই উলিল আমর আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেশী অনুগত ও নৈকট্যশীল বা যার মতের স্বপক্ষে কুরআন ও সুন্নাহর দলীল-আদিল্লাহ বেশী রয়েছে তাঁকে বা তাঁর মতকে অনুসরণ করবেযদি তোমরা আল্লাহ পাক ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাকএটাই কল্যাণকর এবং তা’বিল বা ব্যাখ্যার দিক দিয়ে উত্তম।” (সূরা নিসা ৫৯)
কুরআন শরীফের এ আয়াত শরীফের মধ্যে আল্লাহ পাক বান্দার জন্য ইতায়াত বা অনুসরণের কাইফিয়াত ও তরতীব বর্ণনা করেছেন।

প্রথমতঃ আল্লাহ পাক-এর ইতায়াতের কথা বলা হয়েছে। তা তো কেবল নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছালাত ওয়াস সালামগণের পক্ষেই সম্ভব। কারণ তাঁদেরকেই আল্লাহ পাক ওহী নাযিলের মাধ্যমে সবকিছু জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন, আমি তাঁদের প্রতি ওহী নাযিল করতাম।” (সূরা ইউসূফ ১০৯, সূরা নহল ৭৪, সূরা আম্বিয়া ৭)

দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াতের কথা বলা হয়েছে। এটা তো হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের জন্যই খাছ। কারণ, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁরাই দেখেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে ওহীর ইলম জেনে, শুনে, বুঝে আমল করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত করলো সে মূলতঃ আল্লাহ পাক-এরই ইতায়াত করলো।”(সূরা নিসা ৮০)

তৃতীয়তঃ উলিল আমরের ইতায়াতের কথা বলা হয়েছে। এটাই মূলতঃ পরবর্তীকালের উম্মতের জন্য নির্ধারিত বিধান। এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফের উল্লিখিত আয়াত শরীফসহ আরো বহু আয়াত শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যেমন কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা ঈমান আনো যেরূপ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ঈমান এনেছেন।” (সূরা বাক্বারা ১৩)
(ঈমান ও আমলে) সর্বপ্রথম প্রথম স্থান অধিকারী আনছার ও মুহাজির অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং ইখলাছের সাথে উক্ত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণকারী সকলের প্রতিই আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট, তাঁরাও আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্টহযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও তাঁদের অনুসারীদের জন্য এরূপ বেহেশত নির্ধারিত করে রেখেছেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে, তাঁরা চিরদিন সে বেহেশতে অবস্থান করবেন, যা তাঁদের বিরাট সফলতা।” (সূরা তওবা ১০০)
যে ব্যক্তি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সঠিক পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মু’মিনণের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐদিকেই ফিরাবো যে দিকে সে রুজু হয় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবোআর জাহান্নাম নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।” (সূরা নিসা ১১৫)
এখানে মু’মিনণের পথ বলতে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পথ, অতঃপর তাবিয়ীন, তাবি তাবিয়ীন ও ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের পথকে বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহ পাক সূরা ফাতিহার মধ্যে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দান করে সে পথে চলার জন্য দু’য়া শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, (আয় বারে ইলাহী!) আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শণ করুনতাঁদের পথ যাদেরকে আপনি নিয়ামত দান করেছেন।” (সূরা ফাতিহা ৫-৬)
কাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক নিয়ামত দান করেছেন- নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালিহগণকে এবং তাঁরাই উত্তম বন্ধু বা সঙ্গী।” (সূরা নিসা ৬৯)
আল্লাহ পাক সূরা ফাতিহার মধ্যে নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালিহগণের পথ তলব করতে বলেছেন এবং তাঁদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করতে বলেছেন। অর্থাৎ এখানে দেখা যাচ্ছে, পথ হচ্ছে দু’টি। প্রথমতঃ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথ। দ্বিতীয়তঃ ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালিহগণের পথ তথা উলিল আমরগণের পথ।
উল্লেখ্য, উলিল আমরগণের মধ্যে প্রথম স্তরের উলিল আমর হচ্ছেন হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ। তাঁরা প্রত্যেকেই উম্মাহর জন্য অনুসরনীয়, অনুকরণীয় ও পথপ্রদর্শক ছিলেন।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, যদি তোমরা না জান তাহলে আহলে যিকিরগণের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।” (সূরা আম্বিয়া ৭)
অত্র আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন- আমরা সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণই আহলে যিকিরের অন্তর্ভূক্ত।” (তাফসীরে কুরতুবী)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক নিজেই উম্মাহর জন্য কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ বুঝতে ও আমল করতে উলিল আমরগণের অর্থাৎ সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইতায়াত ও পায়রবী করাকে ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছেন। বিশেষ করে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানা অতীত হওয়ার পর উম্মাহর জন্য মাযহাবের চতুষ্ঠ্যের ইমামগণের অনুসরণ ব্যতীত কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ মুতাবিক আমল করা সম্ভব নয়। কারণ, এই ইমাম ব্যতীত আর কেউই শরীয়তের যাবতীয় মাসায়ালা-মাসায়িল লিপিবদ্ধ করেননি। কাজেই, শরীয়তের প্রতি আমল করতে গেলে এই চার ইমামের একজনকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এটা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত। যদি কোন মাযহাব মান্য করা না হয় তাহলে শরীয়ত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।

হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে মাযহাব গ্রহন করা ফরয-ওয়াজিবঃ

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেন, যে ব্যক্তি শরীয়তের সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর প্রিয় হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণ করাসাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম, তাঁরা আত্মার দিক দিয়ে অধিক পবিত্র, ইলমের দিক দিয়ে গভীর ইলমের অধিকারী, তাঁরা লোক দেখানো কোন আমল করতে জানেনা, আল্লাহ পাক তাঁদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর সাথী হিসেবে মনোনীত করেনসুতরাং তাঁদের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়েল-ফযীলত, শান-শওকত সম্পর্কে অবগত হও এবং তাঁদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং যথাসম্ভব তাঁদের সীরত-ছুরতকে গ্রহণ কর, কারণ তাঁরা হিদায়েত ও সিরাতুল মুস্তাকীন –এর ঊপর দৃঢ়চিত্ত ছিলেন।” (মিশকাত শরীফ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্‌ফাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে আল্লাহ পাককে ভয় কর, আমার সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সম্পর্কে আল্লাহ পাককে ভয় করআমার পরে তাঁদেরকে তিরিস্কারের লক্ষ্যস্থল করোনাতাঁদেরকে যারা মুহব্বত করলো, তা আমাকে মুহব্বত করার কারণেইএবং তাঁদের প্রতি যারা বিদ্বেষ পোষণ করলো, তা আমাকে বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেইতাঁদেরকে যারা কষ্ট দিলো, তারা আমাকে কষ্ট দিলো, তারা আল্লাহ পাককে কষ্ট দিলোআর যারা আল্লাহ পাককে কষ্ট দিলো, তাদেরকে আল্লাহ পাক শীঘ্রই পাকড়াও করবেন।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্‌ফাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেন, একবার আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে নামায পড়লেনঅতঃপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে এমন মর্মস্পর্শী নছীহত করলেন যাতে আমাদের চক্ষুসমূহ অশ্রুসিক্ত এবং অন্তরসমূহ বিগলিত হলোএ সময় একজন সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলে উঠলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটা যেন বিদায় গ্রহণকারীর শেষ নছীহতআমাদেরকে আরো কিছু নছীহত করুনতখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে আমি আল্লাহ পাককে ভয় করা এবং তোমাদের ইমাম বা উলিল আমরের কথা মান্য করা এবং তাঁর অনুগত থাকার জন্য নছীহত করছি যদিও তিনি হাবশী গোলাম হনআমার বিদায়ের পর তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে সে অনেক ইখতিলাফ বা মতবিরোধ দেখতে পাবেতখন তোমারা আমার সুন্নতকে এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রশিদীনের সুন্নতকে মাড়ির দাঁত দ্বারা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে।” (আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিতহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার পর আমার সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সম্পর্কে আমি আল্লাহ পাককে জিজ্ঞাসা করেছি।’ আল্লাহ পাক আমাকে বললেন, ‘হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আপনার সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আমার নিকট তারকা সমতুল্যপ্রত্যেকেরই নূর রয়েছেতবে কারো নূরের চেয়ে কারো নূর বেশীসুতরাং, তাদের যে কোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়িয়ে ধরবে, তারা হিদায়াত পেয়ে যাবেকারণ তাঁদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়াত হিসাবে গণ্য।’ অতঃপর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ প্রত্যেকেই তারকা সাদৃশ্য, তাঁদের যে কাউকে তোমারা অনুসরণ করবে, হিদায়াত প্রাপ্ত হবে’।” (মিশকাত শরীফ)

হাদীস শরীফের উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত বর্ণনার দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, উলিল আমরের অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা এবং কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত মুতাবিক চলা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রদর্শিত বা অনুসৃত পথই সতন্ত্র একটা মাযহাব ছিলো। যার অনুসরণে হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ চলতেন।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, মাযহাবের উৎপত্তি হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ থেকে শুরু হয়েছে। আর তাবিয়ীনে কিরাম এবং তাবি তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যে অনেকেই মাযহাবের ইমাম ছিলেন। কেননা শুরুর যামানায় অনেকেই মুজতাহিদ ছিলেন, উনারা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ পড়ে নিজেই ইজতিহাদ করে চলতেন, কারো অনুসরণ করার প্রয়োজন পড়তো না। কিন্তু তাবিয়ীনে কিরাম এবং তাবি তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের যুগ অতিবাহিত হওয়ার শেষ দিকে অর্থাৎ দু’শত হিজরীর পর ইমাম-মুজতাহিদ্গণ অনুসন্ধান করে দেখলেন যে, কেবলমাত্র চার ইমামের মধ্যেই দ্বীনের পরিপূর্ণ মাসায়ালা রয়েছে। তাই চতুর্থ হিজরী শতকে তাঁরা এ ফতওয়া উপর ইজমা বা ঐক্যবদ্ধ হলেন যে, চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাব অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব এবং তা অমান্য করা বিদায়াতী ও গুমরাহী।
হাদীস শরীফে রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইলম তিন প্রকারএক- আয়াতে মুহকামাহ, দুই- সুপ্রতিষ্ঠিত সুন্নতসমূহ, তিন- ফরীদ্বায়ে আদিলাহ বা ন্যায়সঙ্গত ফরযসমূহইহা ব্যতীত যা রয়েছে তা অতিরিক্ত।” (আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
মূলতঃ মাযহাবের ইমামগণের অনুসরণ এবং ত্বরীক্বার ইমামগণের অনুসৃত পথের অনুসরণই হচ্ছে হাদীস শরীফে বর্ণিত ফরীদ্বায়ে আদিলাহ অন্তর্ভূক্ত।

মুসাল্লামা’ কিতাবে আছে, যে ব্যক্তি মুজতাহিদ (মতলক্ব) নয় যদিও সে আলিম, তথাপি তা জন্য তাক্‌লীদ অর্থাৎ কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করা ফরয।”

হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সাধারণের জন্য আলিমগণকে এবং আলিমদের জন্য মুজতাহিদগণকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।” তিনি আরো বলেন, চার মাহাবের কোন একটাকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।” (তাফসীরে আহ্‌মদিয়াত)

হযরত আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যারা মুজতাহিদ (মতলক্ব)-এর ক্ষমতা রাখে না, তাদের কোন এক ইমামের মাযহাব অনুসরণ করা ওয়াজিব।” (জামউল জাওয়াম)

হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব।” (ইহ্‌ইয়াউ উলুমিদ্দীন)

এছাড়াও হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল মালুম”কিতাবে,
হযরত আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি যাজিযুল মাযাহিব” কিতাবে,
হযরত আল্লামা বাহারুল উলূম রহমতুল্লাহি আলাইহি তাহ্‌‌রির” কিতাবে,
হযরত আল্লামা ইবনে আব্দুর নূর রহমতুল্লাহি আলাইহি হারী”কিতাবে,
হযরত শাহ্‌ ওয়ালীউল্লাহ্‌ মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইকদুল জিদ” ও ইনছাফ” কিতাবে,
তাফসীরে আযীযী”সিফরুছ সায়াদাত” কিতাবে,
ফয়জুল হারামাইন” কিতাবে কোন এক মাযহাবের অনুসরণে চলা ওয়াজিব বলা হয়েছে, অন্যথায় গুনাহ হবে।

হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিমিয়ায়ে সায়াদাত”কিতাবে বলেন, কোন এক মাযহাব মান্য না করলে মহাপাপী হবে।”

ইঞ্জেকশন, ইনহেলার, ইনফিউশন ইত্যাদি রোযা অবস্থায় নিলে রোযা ভঙ্গ হয়। দলীল ভিত্তিক মেগা পোস্ট

ইঞ্জেকশন, ইনহেলার, ইনফিউশন ইত্যাদি রোযা অবস্থায় নিলে রোযা ভঙ্গ হয়। দলীল ভিত্তিক মেগা পোস্ট

বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে ইঞ্জেকশন নেওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। কেননা বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইঞ্জেকশনের ভূমিকা অপরিসীম, বিশেষ করে কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে নিয়মিত ইঞ্জেকশন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নেওয়া, না নেওয়ার ব্যাপারে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। কিছু সংখ্যক নামধারী মাওলানা ইঞ্জেকশনের কার্যকারিতা সম্পর্কে অজ্ঞতা হেতু বিভ্রান্তিমূলক ফতওয়া দিয়েছে যে, রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়না। অথচ ইসলামী শরীয়তের উসুল মোতাবেক যা সম্পূর্ণ ভূল। অর্থাৎ রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নিলে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হবে।

হাদীস শরীফ মোতাবেক শরীয়তের সাধারণ উসুল হলো “শরীরের ভিতর থেকে কোন কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হয় এবং বাইর থেকে কোন কিছু শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়।” রোজার ব্যাপারে ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি–এর যে উসুল, অর্থাৎ “বাইরে থেকে রোজাবস্থায় যে কোন প্রকারে বা পদ্ধতিতে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, যদি তা পাকস্থলী অথবা মগজে প্রবেশ করে, তবে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।” এই উসুলের উপরেই ফতওয়া এবং অন্যান্য ইমাম-মুজতাহিদ্গণও এ ব্যাপারে একমত যে, যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, ওষুধ মগজ অথবা পাকস্থলীতে পৌঁছায়, তবে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, অর্থাৎ ওষুধ ইত্যাদি মগজ পর্যন্ত পৌঁছানো শর্ত।

যে কোন প্রকারের বা পদ্ধতিতেই ইঞ্জেকশন নেওয়া হোক না কেন, ইঞ্জেকশনের ওষুধ কিছু সময়ের মধ্যে রক্তস্রোতে মিশে যায় ও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তের মাধ্যমে তা কয়েক মিনিটের মধ্যে মগজে পৌঁছে যায়। কেননা রক্ত এমন একটি মাধ্যম, যার সাথে সরাসরি শরীরের প্রত্যেকটি কোষ (Cell) ও কলা (Tissue)-এর সংযোগ রয়েছে।

ইঞ্জেকশনের আহ্‌কামঃ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

“আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতদিন তোমরা এ দু’টিকে আকড়ে ধরে রাখবে, (অর্থাৎ মেনে চলবে) ততদিন পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ্ হবে না। একটি হল আল্লাহ পাক-এর কিতাব, অপরটি হল আমার সুন্নাহ।” (মুসলিম শরীফ)

অতএব, আমাদেরকে কোনকিছু করতে হলে, বলতে হলে, তা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের ভিত্তিতেই করতে হবে। তবে কোন বিষয়ে যদি কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া না যায়, তখন সেক্ষেত্রে কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করার আদেশ শরীয়তে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এসেছে, আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহুকে ইয়মেনের গভর্নর করে পাঠনোর সময় বলেছিলেন,
“হে মুয়ায রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহু! তোমার নিকট কোন মুকাদ্দমা আসলে তা কিভাবে ফায়সালা করবে? জবাবে হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহু বললেন, আল্লাহ পাকের কিতাবের দ্বারা। যদি তাতে না পাও তাহলে? আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ দ্বারা। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, যদি তাতেও না পাও তাহলে? আমি কুরআন ও সুন্নাহ্-র ভিত্তিতে ইজতিহাদ করে রায় দেব। এ উত্তর শুনে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সমস্ত প্রসংশা ঐ আল্লাহ পাকের, যিনি তাঁর রসূলের দূতকে এ যোগ্যতা দান করেছেন, যাতে তাঁর রসূল সন্তুষ্ট হন।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)

আর আল্লাহ পাক কালামে পাক-এ ইরশাদ করেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমারা আল্লাহ পাকেরের ইতায়াত করো (অনুসরণ করো) এবং আল্লাহ পাকের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর (আদেশ দাতা) রয়েছে তাঁদের ইতায়াত করো।” (সূরা নিসা ৫৯)

এখানে “উলিল আমর” বলতে ইমাম, মুজতাহিদ, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং “উলিল আমর” যেমন ক্বিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে থাকবেন, তদ্রুপ ইজতিহাদের দরজাও ক্বিয়ামত পর্যন্ত খোলা থাকবে। আর ইজমা-ক্বিয়াস এই ইজতিহাদেরই অন্তর্ভূক্ত। অতএব, পৃথিবীতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত নতুন সমস্যারই উদ্ভব হোক না কেন, তার ফায়সালা অবশ্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে করতে হবে।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আমরা শরীরের রোগ নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওষুধ সেবন বা ব্যবহার করে থাকি, তার মধ্যে একটি অন্যতম পদ্ধতি হল- ইঞ্জেকশন। এ ইঞ্জেকশন বর্তমান আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক বিশেষ পদ্ধতি, যা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করছে। কিন্তু কথা হচ্ছে ইসলামের ৫টি ভিত্তির মধ্যে অন্যতম একটি ভিত্তি হলো- রমজান মাসের রোজা, যেটা উম্মতে মুহম্মদীর জন্য ফরযে আইন করা হয়েছে। এটার অস্বীকারকারী কাফির আর তরক করলে কবীরা গুণাহ হবে। অতএব উক্ত ফরয রোজাগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে হবে আর সঠিকভাবে আদায় করতে হলে অবশ্যই তার মাসয়ালা-মাসায়িলগুলো জানতে হবে। অর্থাৎ কি করলে রোজা ভঙ্গ হয়, আর কি করলে রোজা ভঙ্গ হয় না, এ সম্পর্কিত ইল্‌ম (জ্ঞান) অর্জন করাও ফরয। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“প্রত্যেক মুসলমানের (নর-নারী) জন্য ইল্‌ম অর্জন করা ফরয।” (ইবনে মাজাহ, বায়হাক্বী)

অতএব শরীয়ত সম্পর্কিত সকল বিষয়ের প্রয়োজনীয় ইল্‌ম অর্জন করা যেমন ফরয তদ্রুপ রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে কিনা এ সম্পর্কিত ইল্‌ম অর্জন করাও ফরয। সুতরাং যারা না জেনে রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নিবে, তারা এ সম্পর্কিত ইল্‌ম অর্জন না করার কারণে ফরয তরকের গুণাহে গুণাগার হবে।

মূলতঃ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমাম, মুজতাহিদ্গণ তাঁদের ফিক্বাহের কিতাবসমূহে রোজা ভঙ্গ হওয়া, না হওয়ার কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। তবে সম্প্রতি যে বিষয়টি নিয়ে মুসলিম উম্মাহ বেশী সমস্যার সম্মুখীন, তা হলো- রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা। পূর্ববর্তী ইমাম, মুজতাহিদ্গণের সময় যেহেতু ইঞ্জেকশনের ব্যবহার ছিলনা, তাই উনারা ইঞ্জেকশন সম্পর্কে কোন আলোচনা করেননি। তবে রোজা ভঙ্গ হওয়া, না হওয়ার কারণ বা উসুলসমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে গিয়েছেন। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে কি হবেনা। হাদীস শরীফ, ফিক্বাহ্‌-এর কিতাবে বর্ণিত উসুল ও বর্তমান আধুনিক বিশ্বের উন্নততর চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভালভাবে তাহক্বীক বা গবেষণা করার পর এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইঞ্জেকশন সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কিছু আলোচনা করা হলো-

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ইঞ্জেকশনঃ রোগ নিরাময়ের জন্য আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে (বিভিন্ন Dosage Form-এ) ওষুধ সেবন করি। বিভিন্ন Dosage Form- বলতে বোঝায় ওষুধ গ্রহণের যত রকম পদ্ধতি আছে, যেমন- ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সাসপেনশন, সিরাপ, ইঞ্জেকশন ইত্যাদি। ইঞ্জেকশন হচ্ছে সেই Dosage Form-এর একটি পদ্ধতি। ইঞ্জেকশন পদ্ধতিটি মূলতঃ প্যারেন্ট্যারাল (Parenteral) পদ্ধতির একটি অংশ। প্যারেন্ট্যারাল পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়- প্যারেন্ট্যারাল পদ্ধতিটি হচ্ছে সে পদ্ধতি, যেখানে এক বা বেশী সংখ্যক শরীরের ত্বকের স্তর বা মিউকাস মেমব্রেনের স্তরের মধ্য দিয়ে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে ওষুধ প্রবেশ করানো হয়।
ইঞ্জেকশনকে ৫টি সাধারণ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে-

(১) দ্রবণ জাতীয় ইঞ্জেকশন,
(২) শুষ্ক দ্রব্য, কিন্তু শরীরে ইঞ্জেকশন পদ্ধতিতে দেয়ার পূর্বে কোন দ্রবণে দ্রবীভূত করে নেয়া যায়,
(৩) সাসপেনশন জাতীয়,
(৪) শুষ্ক, অদ্রবণীয় দ্রব্য কিন্তু কোন মাধ্যমে মিশিয়ে দেয়া হয়,
(৫) ইমালশন জাতীয়।

এই ৫ প্রকার ইঞ্জেকশন আবার বিভিন্ন পথে শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং কোন্‌ পথে ইঞ্জেকশন দেয়া হবে, তা নির্ভর করে সাধারণতঃ ওষুধের গুণাগুনের উপর। যেমন- সাসপেনশন জাতীয় ইঞ্জেকশন সরাসরি রক্তে দেয়া হয় না, কেননা বড় বড় দানা রক্ত জালিকা বন্ধ করে দিতে পারে। আবার সলিউশন জাতীয় ইঞ্জেকশন ত্বকের স্তর দিয়ে দিতে হলে Tonicity adjustment খুব গুরুত্বপূর্ণ, নতুবা ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। সে কারণেই ইঞ্জেকশন আবার বিভিন্ন পদ্ধতিতে দেয়া হয়। এর মধ্যে নিচের মাধ্যমগুলো উল্লেখযোগ্য-

(১) Intravenous (ইন্ট্রাভেনাস)
(২) Subcutaneous (সাবকিউটেনিয়াস)
(৩) Intradermal (ইন্ট্রাডার্মাল)
(৪) Intramuscular (ইন্ট্রামাসকিউলার)
(৫) Intrathecal ((ইন্ট্রাথিকাল)
(৬) Intra areterial (ইন্ট্রা আরটারিয়াল)

Intravenous (ইন্ট্রাভেনাস)– এ পদ্ধতিতে শিরার মাধ্যমে রক্তে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় এবং ওষুধ সরাসরি রক্তে মিশে যায়।
Subcutaneous (সাবকিউটেনিয়াস)- শরীরে ত্বকের এবং মিউকাস মেমব্রেনের এক বা একাধিক স্তরের মধ্য দিয়ে এ পদ্ধতিতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় এবং ওষুধ রক্তে মিশে যায়।
Intramuscular (ইন্ট্রামাসকিউলার)-এ পদ্ধতিতে ওষুধ শরীরের পেশীসমূহের মধ্যে প্রয়োগ করা হয় এবং কিছু সময় পর ওষুধ রক্ত স্রোতে গিয়ে মিশে।
Intrathecal ((ইন্ট্রাথিকাল)- অনেক সময় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে ওষুধ অন্যান্য পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে বিলম্বে পৌঁছায় আর সে কারণে এখন এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে ওষুধ সহজেই কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছায়।

এটা সহজেই বোঝা যায় যে, ইঞ্জেকশনের যে কোন পদ্ধতিতেই শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করা হোক না কেন শরীরে ওষুধ শোষনের কিছু সময় পরেই রক্ত স্রোতের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ওষুধ মূলতঃ রক্ত স্রোতের মাধ্যমেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে, কেননা রক্তকে বলা হয় সংযোগ কলা। রক্তের সংজ্ঞায় বলা হয়- রক্ত হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে খাদ্য, অক্সিজেন, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান কলাসমূহে পৌঁছে এবং বর্জ্য দ্রব্যসমূহ বহন করে নিয়ে আসে। এটা এক ধরণের সংযোগ কলা। সুতরাং রক্ত স্রোতে পৌঁছে ওষুধ শরীরের সর্বাংশে ছড়ায় অর্থাৎ মগজে পৌঁছে।

Brain (মগজ)- আমাদের মগজের উপর আছে ৩টি পর্দা-
(১) Dura Mater (ডুরা মিটার)
(২) Arachnoid (এরাকনয়েড)
(৩) Pia Meter (পায়া মিটার)

ডুরা মিটারের গঠন একটু পুরু এবং পায়া মিটার অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটি পর্দা, যা কিনা মগজকে ঢেকে আছে। আর এ দুয়ের মাঝামাঝি হলো এরাকনয়েড। রক্তনালী এ ৩টি পর্দা পার হয়ে মগজে পৌঁছেছে এবং জালিকার মতো মগজের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে আছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, ইঞ্জেকশন সাধারণতঃ দু’ধরণের হয়ে থাকে- (১) ওষুধ ভিত্তিক ও (২) খাদ্য ভিত্তিক ইঞ্জেকশন, উভয়টির একই হুকুম।

এ পর্যন্ত আলোচনায় আমরা ধারণা পেলাম যে, যত প্রকারের ইঞ্জেকশন হোক না কেন, তা এক সময় রক্ত স্রোতে মিশবে এবং মগজে পৌঁছাবে। অতএব, চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্যবহুল আলোচনার দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ইঞ্জেকশন ইত্যাদি মগজে পৌঁছে। সুতরাং রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ফিক্বাহ-এর কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে,
“যা নাক, কান, পায়খানার রাস্তা ইত্যাদি দ্বারা মগজ অথবা পেটে পৌঁছবে, তাতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।” (বাদায়ে)

এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয় যে,
“কান, নাক ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ ইত্যাদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছা সকলের নিকটেই রোজা ভঙ্গের কারণ।” (খোলাসাতুল ফতওয়া) অনুরূপ হিদায়া, আইনুল হিদায়া, মাবসূত, বাহ্‌রুর রায়িক, রদ্দুল মুহ্‌তারে উল্লেখ আছে।

উপরোক্ত কিতাবসমূহে যদিও ওষুধ ইত্যাদি মূল রাস্তা অর্থাৎ নাক, কান, মুখ ইত্যাদি দিয়ে মগজ অথবা পেটে পৌঁছার কথা বলা হয়েছে কিন্তু ইমামগণের নিকট মূল রাস্তা শর্ত নয়, যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
“হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রোজা ভঙ্গের কারণ হলো- রোজা ভঙ্গকারী কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করা। সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য, মূল রাস্তা নয়।”(মাবসূত)

আর ফতহুল ক্বাদীর ২য় জিলদ্‌ ২৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে,
“হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য।”

অতএব, মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করুক অথবা মূল রাস্তা ব্যতীত অন্য কোন স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন, যদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
রোজা ভঙ্গের ব্যাপারে ফিক্বাহ্‌র কোন কিতাবেই মূল রাস্তাকে শর্ত করা হয় নি অর্থাৎ কোথাও এ কথা বলা হয় নি যে, রোজা ভঙ্গ হওয়ার জন্য ওষুধ ইত্যাদি মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করা শর্ত।

আর সাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি মূল রাস্তাকে গ্রহণ করেছেন, তবে উনারা মূল রাস্তাকে এ জন্যই গ্রহণ করেছেন যে, মূল রাস্তা দিয়ে ওষুধ ইত্যাদি পেটে অথবা মগজে পৌঁছার ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকে না কিন্তু অন্য স্থান দিয়ে প্রবেশ করলে তাতে সন্দেহ থেকে যায়। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
“মূল রাস্তা ব্যতীত অন্য কোন স্থান দিয়ে যদি কোন কিছু প্রবেশ করানো হয়, আর তা যদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে সাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে রোজা ভঙ্গ হবে না। উনারা দু’জন মূল রাস্তাকে গ্রহণ করেছেন, কেননা মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করা বিশ্বাসযোগ্য, আর অন্য স্থান দিয়ে প্রবেশ করা সন্দেহযুক্ত। সুতরাং আমরা সন্দেহের উপর ভিত্তি করে রোজা ভঙ্গের আদেশ দিতে পারি না।” (বাদায়ি, অনূরূপ ফতহুল ক্বাদীর)

এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয় যে,
“যখন জানা যাবে যে, শুকনা ওষুধ মগজ অথবা পেটে পৌঁছেছে, তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি জানা যায় যে, ভিজা ওষুধ মগজ অথবা পেটে পৌঁছেনি, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। অনূরূপ এনায়াতে উল্লেখ আছে। আর যদি পৌঁছালো কি পৌঁছালো না কোনটিই জানা না যায়, আর এমতবস্থায় ওষুধ যদি ভিজা হয়, তবে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহির মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ, স্বভাবতঃ ভিজা ওষুধ পৌঁছে থাকে। আর সাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- (ওষুধ মগজে পৌঁছালো কি পৌঁছালো না) এটা নিশ্চিতভাবে না জানার কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা সন্দেহের দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয়না। আর যদি ওষুধ শুকনা হয় এবং যদি জানা না যায় যে, পৌঁছালো কি পৌঁছালোনা, তবে কারো মতেই রোজা ভঙ্গ হবেনা। অনূরূপ ফতহুল ক্বাদীরে উল্লেখ আছে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা-২০৪)

ফতওয়ায়ে হিন্দীয়াতে এ বিষয়টা আরো সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। যেমন বলা হয়-
“ওষুধ মগজে অথবা পেটে পৌঁছাটাই মূলতঃ গ্রহণযোগ্য অর্থাৎ রোজা ভঙ্গের কারণ। ওষুধ শুকনা বা ভিজা হওয়া নয়।”

উপরোক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, ওষুধ ইত্যাদি মূল রাস্তা ব্যতীত অন্যস্থান দিয়ে পৌঁছার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে সাহেবাইনের মূলতঃ কোন মতভেদ নেই। অর্থাৎ তাঁদের সকলের মতেই যদি নিশ্চিত জানা যায় যে, ওষুধ ইত্যাদি মগজ বা পেটে পৌঁছেছে এবং ওষুধ ইত্যাদি মগজে পৌঁছার ব্যাপারে যদি কোন সন্দেহ না থাকে, তবে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ন্যায়, সাহেবাইনের মতেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তা মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করুক বা অন্য স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন। অতএব, ইঞ্জেকশনের দ্বারা ব্যবহৃত ওষুধের ব্যাপারে যেহেতু প্রমাণিত হয়েছে যে, তা নিশ্চিত মগজে পৌঁছে, সেহেতু সকলের ঐক্যমতে রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। যদিও তা মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করেনি। অতএব, মূলরাস্তা শর্ত নয়, শর্ত হলো মগজ বা পেটে পৌঁছা।

উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, রোজা ভঙ্গকারী কোন কিছু যেমন ওষুধ ইত্যাদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অর্থাৎ ফিক্বাহ্‌বিদ্গণের নিকট রোজা ভঙ্গ হওয়ার জন্য ওষুধ ইত্যাদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছা শর্ত। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের বক্তব্যের দ্বারা যেহেতু স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে, ইঞ্জেকশন মগজে পৌঁছে যায়, সেহেতু ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

আর লোমকুপ, অন্যান্য জখম বা ত্বকের মধ্য দিয়ে অর্থাৎ মূল রাস্তা ব্যতীত অন্য রাস্তা দিয়েও যে ওষুধ অর্থাৎ মলম, মালিশ ইত্যাদি রক্তে পৌঁছে, তা নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আলোচনা করা হলো-

মলমের বর্ণনাঃ এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ- ফার্মাসিউটিক্যাল সেমিসলিড প্রিপারেশনস সমূহের মধ্যে রয়েছে, মলম (Ointment), পেষ্ট (Paste), ক্রীম (Cream), ইমালশান (Emulsion), জেল (Gel) ইত্যাদি। এ সবগুলোর মাধ্যমেই ত্বকে ওষুধ প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে খুব অল্পসংখ্যক মাধ্যম দ্বারা (Topical Semisolid Dosage Forms) মিউকাস মেমব্রেনে যেমনঃ রেকটাল টিস্যু (Rectal Tissue),বাক্কাল টিস্যু (Buccal Tissue),ইউরিথ্রাল মেমব্রেন (Urethral Membrane), কানের বাইরের ত্বক (External Ear Lining), নাকের মিউকোসাতে (Nasal Mucosa) এবং চোখের কর্ণিয়াতে (Cornia) ওষুধ দেয়া হয়। মিউকাস মেমব্রেনে ওষুধ প্রবেশ করলে, তা রক্তে ছড়িয়ে যায় কিন্তু শরীরের সাধারণ ত্বক তুলনামূলকভাবে মিউকাস মেমব্রেনের চেয়ে কম ওষুধ প্রবেশের যোগ্যতা রাখে।

ত্বকের মধ্য দিয়ে ওষুধের প্রবেশ পথটি বর্ণনার পূর্বে আমরা ত্বক নিয়ে আলোচনা করব। এনাটমী অনুযায়ী ত্বকের প্রধানতঃ ৩টি স্তর।

১। বহিঃত্বক (Epidermis)
২। অন্তঃত্বক (Dermis)
৩। ত্বকের চর্বির স্তর (Subcutaneous Fat Layer)

এদের মধ্যে সবচেয়ে বাইরের অংশটিকে বলা হয় ষ্ট্রেটাম কর্নিয়াম অথবা হর্ণি স্তর (Stratum Corneum or Horny Layer)। ষ্ট্রেটাম কর্নিয়ামের নীচে বহিঃত্বক এবং বহিঃত্বকের নীচে রয়েছে অন্তঃত্বক কোরিয়াম (Corium)।
জানা গেছে যদি ত্বকে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় এবং তা কোনভাবে ষ্ট্রেটাম কর্নিয়াম ভেদ করে, তবে পরবর্তীতে বহিঃত্বকীয় এবং কোরিয়াম স্তর ভেদ করে যেতে উল্লেখযোগ্য কোন বাধা নেই এবং সহজেই ক্যাপিলারির মাধ্যমে রক্ত স্রোতে মেশে।

ত্বকের মধ্য দিয়ে ওষুধ প্রবেশের ব্যাপারে Biopharmaceutics–এ বলা হয়েছে-
সাধারণতঃ ত্বকের মধ্য দিয়ে এবং আরো কয়েকটি মাধ্যম দিয়ে রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে বায়োলজিক মেমব্রেনের মধ্য দিয়ে নিস্ক্রিয় ব্যাপন (Passive Diffusion) দ্বারা এবং এ সকল মেমব্রেনসমূহ লিপয়ডাল প্রতিবন্ধকতা (অর্থাৎ চর্বি জাতীয় স্তর) তৈরী করা, যা শরীরের ভিতরের অংশ থেকে বাইরের অংশকে পৃথক করে।

বায়োলজিক মেমব্রেন সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে-
বায়োলজিক মেমব্রেন হচ্ছে চর্বি জাতীয় এবং যার মধ্য দিয়ে চর্বিদ্রাব্য ওষুধ প্রবাহিত করা হয়। এবং এ সকল মেমব্রেনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার যোগ্যতার উপর নির্ভর করে এবং একটি ওষুধের চর্বিদ্রাব্যতা নির্ধারিত হয় সাধারণত ওষুধের অণুর মধ্যে নন-পোলার গ্রুপের উপস্থিতির উপর এবং পাশাপাশি যেগুলো আয়নিক অবস্থায় ভেঙ্গে যায় এবং pH দ্বারা প্রভাবিত হয় তার উপর। সুতরাং এ পর্যন্ত যে ধারণা পাওয়া গেল তা হচ্ছে-
(১) সেমিসলিড প্রিপারেশনসমূহের মধ্যে যেমন, মলম, ক্রীম, জেল (Gel) ইত্যাদি শরীরে প্রয়োগ করলেই তা শরীরে শোষিত হবেনা। কেননা কোল্ড ক্রীম, ভেনিসিং ক্রীম এগুলোও টপিক্যালি ব্যবহৃত হয় এবং সেমিসলিড প্রিপারেশন।
(২) রক্তে শোষণের জন্য প্রয়োজন জায়গা নির্বাচন করা যেমন রেকটাল টিস্যু, বাক্কাল টিস্যু ইত্যাদি।
(৩) ওষুধের গুণাগুণের উপর শোষণ নির্ভরশীল, অর্থাৎ ত্বকে চর্বিদ্রাব্য ওষুধ প্রয়োগ করলে বেশী মাত্রায় শোষিত হয়। কেননা বায়োলজিক মেমব্রেন দিয়ে সহজেই প্রবেশ করে।

সাধারণত ত্বকের মধ্য দিয়েও প্রবেশ করতে পারে, তবে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে-
যেহেতু একটি প্রয়োগকৃত ওষুধ শরীরের ত্বকের বিভিন্ন স্থানে অনুপ্রবেশের যোগ্যতা রাখে, সেহেতু ওষুধ প্রয়োগের জায়গা নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কি মাত্রায় ত্বকে প্রবেশ করবে, তা নির্ভর করে ত্বকে ওষুধের প্রবেশ্যতা উপর,ত্বকের pH-এর উপর এবং ষ্ট্রেটাম কর্নিয়ামের ও সহযোগী কলার উপর। ওষুধ লোমকূপ দ্বারা, ঘর্মগ্রহ্নি দ্বারা, সিবসিয়াসগ্রহ্নি দ্বারা প্রবেশ করতে পারে।

সর্বশেষে বলা যায়,এখন পর্যন্ত ত্বকের উপর ওষুধ প্রয়োগ করা হয় স্থানিক প্রভাব (Local Effect) বিস্তারের জন্য। যেহেতু ত্বকের মধ্য দিয়ে ওষুধের প্রবেশের ঘটনা ভালভাবে জানা হয়েছে, সেহেতু চর্বিদ্রাব্য এবং উপযুক্তভাবে সক্রিয় ওষুধসমূহ ত্বকের উপর এ কারণেই প্রয়োগ করা হয়, যাতে রক্তে ওষুধের প্রয়োজনীয় মাত্রা পাওয়া যায়।
যেহেতু রোজা রেখে গোসল করলে বা শরীরে তেল মালিশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। তাই শরীরে প্রবেশ করতে পারে এমন তৈলাক্ত উপাদান যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি, কোল্ড ক্রীম, ভেনিসিং ক্রীম ইত্যাদি প্রয়োগেও রোজা ভাঙ্গে না। কেননা এগুলোর সঙ্গে কোন ওষুধ মিশ্রিত থাকে না। কিন্তু যদি উপরোক্ত তৈলাক্ত উপাদানসমূহে ওষুধ থাকে, বিশেষতঃ যেগুলো চর্বিদ্রাব্য এবং ষ্ট্রেটাম কর্নিয়াম ভেদ করবে জানা যায়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে।
উপরোক্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ওষুধ ইত্যাদি (যেমন মলম, মালিশ) লোমকূপ দ্বারা, ঘর্মগ্রন্থি দ্বারা বা অন্যান্য জখমের দ্বারা ভিতরে প্রবেশ করে থাকে। সুতরাং মলম ইত্যাদি লাগালে যদি জানা যায়, তা রক্তে শোষণ ঘটেছে এবং মগজে বা পেটে পৌঁছেছে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে যে কোন জখমেই ওষুধ প্রয়োগ করা হোক না কেন, তা যদি শিরায় পৌঁছে, তবে তা সহজে মগজে পৌঁছাবে। অতএব জখমের মধ্যে ওষুধ দিলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে ফিক্বাহ্‌র কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
“জায়েফা (অর্থাৎ পাকস্থলী) এবং আম্মাহ্‌তে (অর্থাৎ মগজ) যে ওষুধ দেওয়া হয়, উক্ত ওষুধ যদি শুকনা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা উক্ত ওষুধ পেট অথবা মগজে পৌঁছে না। আর যদি জানা যায় যে, উক্ত ওষুধ মগজে অথবা পেটে পৌঁছে, তবে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহির মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর ওষুধ যদি ভিজা হয়, তবেও ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহির মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।” (বাদায়ে, হিদায়া, আলমগীরী, আইনুল হিদায়া, মাবসূত ইত্যাদি)
মূলকথা হলো- যে কোন জখম দ্বারা যে কোন ওষুধ প্রবেশ করানো হোক না কেন, যদি জানা যায় যে, তা মগজ অথবা পেটে পৌঁছেছে, তবে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে যেহেতু জখমে ওষুধ প্রয়োগ করালে তা রক্তস্রোতে পৌঁছে যায় এবং রক্তস্রোতের মাধ্যমে মগজে পৌঁছে যায়, সেহেতু জখমে ওষুধ দিলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

অতএব, যেকোন স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন যদি তা মগজে বা পেটে পৌঁছে, তবে সকলের মতেই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাছাড়া এ মতের স্বপক্ষে হাদীস শরীফেরও সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন- হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে মরফূ সূত্রে বর্ণিত, নিশ্চয় রোজা ভঙ্গ হবে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, বের হলে নয়। হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, ওজুর ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীর থেকে কিছু বের হলে ওজু ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না। আর রোজার ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবে, বের হলে নয়। আর তিবরানী ও ইবনে আবী শায়বা, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবে, বের হলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

উপরোক্ত হাদীস শরীফের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শরীরের ভিতরে কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। উক্ত হাদীস শরীফে মূল রাস্তাকে শর্ত করা হয়নি।

তবে সর্বক্ষেত্রেই ভিতরে কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয় এবং বের হলে রোজা ভঙ্গ হবে তা নয়। যেমন- সাপে কাটলে রোজা ভঙ্গ হয় না। অথচ সাপের বিষ ভিতরে প্রবেশ করে থাকে। অনূরূপ শরীর হতে রক্ত বের হলে বা বের করা হলেও রোজা ভঙ্গ হয় না। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
“৩টি জিনিস রোজা ভঙ্গ করে না- (১) শিঙ্গা লাগালে (অর্থাৎ শিঙ্গা দ্বারা শরীর থেকে যদি ইচ্ছাকৃতভাবেও রক্ত বের করে তবেও রোজা ভঙ্গ হবে না, এখন তা যেভাবেই বের করা হোক), (২) অনিচ্ছাকৃত বমি, (৩) স্বপ্নদোষ।”

অনেকে সাপে কাটার সাথে ইঞ্জেকশনকে তুলনা করে, বলে থাকে- সাপে কাটলে যেমন বিষ ভিতরে প্রবেশ করা সত্ত্বেও রোজা ভঙ্গ হয় না, তদ্রুপ ইঞ্জেকশনেও রোজা ভাঙ্গবে না। মূলতঃ ইঞ্জেকশনের দ্বারা যে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তার সাথে সাপের বিষকে কখনো মিলানো যাবে না, কেননা এ বিষ প্রবেশের ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। এ ব্যাপারে আরো বলা যেতে পারে, যেমন রোজাবস্থায় আগরবাতি জ্বালালে, ধুমপান করলে, কোন গ্যাস নাক দিয়ে গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। কেননা এ ক্ষেত্রে সবগুলো কাজ ইচ্ছা শক্তির নিয়ন্ত্রনে। অথচ রাস্তায় চলা-ফেরার সময় ও রান্না-বান্নার সময় যে ধোঁয়া গ্রহণ করি, তাতে রোজা ভঙ্গ হয় না। কেননা এটা আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। অতএব, ইঞ্জেকশনের সাথে সাপের বিষের সাথে ক্বিয়াস করা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ ইঞ্জেকশন ইচ্ছাকৃতভাবেই দেওয়া হয়।

অনূরূপ যদি কেউ ভুলে পেট ভরেও খাদ্য খায়, তবে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। আর অখাদ্য যেমন পাথর, কাঠের টুকরা ইত্যাদি ইচ্ছাকৃতভাবে খেলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তদ্রুপ ওযূর পানি অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখের ভিতর চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এরূপ অবস্থায় রোজা কাজ্বা রাখতে হবে।

মূল কথা হলো- আমাদের নিকট মূল রাস্তা শর্ত নয় বরং শরীরের যেকোন স্থান দিয়েই ওষুধ ইত্যাদি প্রবেশ করুক না কেন, যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, তা মগজে অথবা পেটে পৌঁছেছে তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অতএব, ইঞ্জেকশনের দ্বারা যে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তা যে মগজে পৌঁছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এটাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমত। সুতরাং ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, নাকে ওষুধ দিলে তা পেটে প্রবেশ করতে পারে এবং পায়খানার রাস্তায় ওষুধ প্রবেশ করলে ওষুধের রক্তে শোষণের মাধ্যমে মগজে যেতে পারে কিন্তু কানের সাথে পেটের এবং মগজের সরাসরি কোন সংযোগ নেই। আসলে কানে ওষুধ গেলে কখনো রোজা ভাঙ্গবে, আবার কখনো ভাঙ্গবে না। কানে পানি গেলে রোজা ভাঙ্গবে না, কিন্তু তেল গেলে রোজা ভাঙ্গবে, এ ব্যপারে ইজমা হয়ে গেছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, পানি বাহিত ওষুধ কানে প্রয়োগ করালে রোজা ভাঙ্গবে না, কিন্তু তেল বাহিত ওষুধ কানে প্রয়োগ করালে রোজা ভাঙ্গবে। পানি বাহিত ওষুধে রোজা না ভাঙ্গার কারণ হলো- ওষুধে পানির উপস্থিতি এবং তেল বাহিত ওষুধে রোজা ভাঙ্গার কারণ হলো ওষুধে তেলের উপস্থিতি। মূলতঃ সকলেই একমত যে, কানে তেল গেলে রোজা ভাঙ্গবে, পানি গেলে রোজা ভাঙ্গবেনা। মগজ বা পেটে প্রবেশ করুক আর না করুক, এটার উপরই ফতওয়া। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
“যদি কানের ভিতর তেলের ফোটা ফেলা হয়, তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, এতে কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হবে না। অনূরূপ হিদায়াতে উল্লেখ আছে। আর যদি তেল অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রবেশ করে, তবেও তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এটা মুহীতে সারাখসীতে আছে। আর যদি কানের তেলের ফোটা ফেলে, তবে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। এটা হিদায়াতে আছে এবং এটাই সহীহ মত।” (আলমগীরী ১ম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা-২০৪)

সুতরাং কানে ওষুধ প্রয়োগে রোজা ভাঙ্গা বা না ভাঙ্গার পিছনে এ উসুলকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাকস্থলী বা মগজে পৌঁছানোকে নয়। অনূরূপ কেউ যদি চোখে সুরমা ব্যবহার করে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না, এ ব্যাপারে ফতওয়া হয়ে গেছে অথচ চোখ হতে গলা পর্যন্ত রাস্তা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে,
“যদি চোখে সুরমা দেয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না, কেননা চোখ হতে মগজ পর্যন্ত রাস্তা নেই।” (হিদায়া ১ম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা-২১৭)

মূলতঃ সুরমা মগজে বা পাকস্থলীতে পৌঁছুক আর না পৌঁছুক কোন অবস্থাতেই সুরমা ব্যবহারে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাবস্থায় সুরমা ব্যবহার করেছেন। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়-
“হযরত আয়িশা সিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাবস্থায় সুরমা ব্যবহার করেছেন।”

অতএব, যেসব বিষয় সরাসরি হাদীস শরীফ বা ইজ্‌মা দ্বারা সাব্যস্ত হয়ে গেছে, ঐ সকল ব্যাপারে কোন ক্বিয়াস বা উছূল গ্রহণযোগ্য নয়। মূলকথা হলো- কানে তেল গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, পানি গেলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ এ ব্যাপারে ইমামদের ইজ্‌মা হয়ে গেছে। অনূরূপ চোখে সুরমা দিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ হাদীস শরীফে আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাবস্থায় সুরমা ব্যবহার করেছেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ের ফায়সালাঃ আমরা জেনেছি কি করে ইঞ্জেকশন প্রয়োগে রোজা ভাঙ্গে। মলম লাগালেও রোজা ভাঙ্গতে পারে সে ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। এ দু’টো ক্ষেত্রেই রোজা ভাঙ্গার মূলকারণ হচ্ছে- প্রথমতঃ রক্তে ওষুধের শোষণ এবং দ্বিতীয়তঃ মগজে বা পাকস্থলীতে প্রবেশ করা। ওষুধ, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োগ করলে মগজ বা পেটেও যে পৌঁছায় তা নীচের উদাহরণটি থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়-
আমাদের পাকস্থলীতে রয়েছে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি- একটি অক্সিন্টিক গ্রন্থি (Oxyntic or Gastric Gland) অপরটি পাইলোরিক গ্রন্থি (Pyloric Gland)। অক্সিন্টিক গ্রন্থিতে থাকে প্যারাইটাল কোষ এবং প্যারাইটাল কোষের H2 receptor উত্তেজিত হলে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয়। যখন শিরা অথবা পেশীতে রেনিটিডিন (Ranitidine) ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করা হয় তখন রেনিটিডিন প্যারাইটাল কোষের H2 receptorকে ব্লক করে। ফলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয় না। সুতরাং এর দ্বারা পেটে ওষুধের কার্যকারীতা বুঝা গেল। রেনিটিডিন রক্তের মাধ্যমে সহজেই মগজে পৌঁছে। শুধু তাই নয়, মগজের কোষেও অল্পমাত্রায় শোষণ ঘটে।
সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনে নানা জিনিসের ব্যবহার বেড়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে অনেক। পূর্বে যে সকল পদ্ধতিতে চিকিৎসা হতো, এখন চিকিৎসা পদ্ধতির মান, উপকরণ সবই বেড়েছে। এ সকল পদ্ধতির অনেক কিছুই আমরা রোজাবস্থায় ব্যবহার করছি। কিন্তু উপকরণগুলো রোজাবস্থায় ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না, সে ব্যাপারে হয়তো আমাদের অনেকেরই সঠিক কোন ধারণা নেই। সে কারণে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো-

ইনহেলার (Inhelar): বাজারে যে সকল ইনহেলার পাওয়া যায়। তার Base হচ্ছে এরোসল (Aerosol) অর্থাৎ এরোসলের মাধ্যমেই ওষুধ নাকের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। উদাহরণ হিসেবে সলবিউটামল ইনহেলারের কথাই ধরা যাক। সলবিউটামল ইনহেলার নেয়া হয় এবং প্রথমবার ওষুধ গ্রহণের মাত্রা যদি হয় ৪০ থেকে ১০০ মাইক্রোগ্রাম, তবে সর্ব্বোচ্চ প্লাজমা ঘনত্বে (Peak Plasma Concentration) পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩-৫ ঘন্টা। রক্তে পৌঁছালে যেহেতু ওষুধ মগজে পৌঁছে, সুতরাং রোজা ভেঙ্গে যাবে।

ইনফিউশন (Infusion): অনেকেরই শারিরীক অসুস্থতার কারণে স্যালাইন নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। বাজারে গ্লুকোজ, ডেক্সট্টোজ স্যালাইন পাওয়া যায়। রোজা রেখে স্যালাইন গ্রহণে অবশ্যই রোজা ভেঙ্গে যাবে।

চেতনানাশক (Anaesthesia): চেতনানাশক সাধারণতঃ গ্রহণ করা হয় শ্বাসের (Inhelation) মাধ্যমে, শিরার মধ্য দিয়ে বা কখনও পেশীর মধ্য দিয়ে। যেগুলো শ্বাসের মাধ্যমে নেয়া হয় তাতে রয়েছে- ক্লোরফর্ম, সাইক্লোপ্রোপেন, এনফ্লুরেন, ইথার, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি। ক্লোরফর্মের কথাই ধরা যাক। ক্লোরফর্ম খুব সহজেই শোষিত হয়, রক্তে এবং মগজে ওষুধের মাত্রা খুব অল্প সময়েই পৌঁছে যায়।
রাসায়নিকভাবে স্থানিক চেতনানাশক (Local Anaesthetic) আবার দুই প্রকার-
(১) পুরনো উপাদানসমূহ, যেমন- এষ্টার।
(২) সাম্প্রতিক উপাদানসমূহ, যেমন- এমাইড।
এছাড়া রয়েছে বেঞ্জাইল এলকোহল, মেনথল, ফেনল, এরোসল, প্রপিলেন্ট ইত্যাদি। বেশীরভাগ স্থানিক চেতনানাশকগুলো খুব দ্রুত ত্বকের মাধ্যমে, মিউকাস মেমব্রেনের স্তর এবং ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে খুব দ্রুত হৃৎপিন্ড (Heart), মগজ (Brain), বৃক্ক (Kidney) এবং অন্যান্য কলাতে ছড়িয়ে যায়। সুতরাং সহজেই সিদ্ধাতে আসা যায় রোজাবস্থায় চেতনানাশক দিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

সাসটেইন্‌ড রিলিজ ড্রাগ (Sustained Release Drug): কিছু ওষুধ রয়েছে, যা একবার সেবন করলে তা শরীর থেকে ধীরে ধীরে রক্তে প্রয়োজনীয় মাত্রা নিঃসরণ করে। ফলে বার বার ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে না। এর মধ্যে কিছু ইঞ্জেকশন রয়েছে, যা ৭দিনে একটি নিলেই হয়। কিছু ট্যাবলেট রয়েছে, যা ২৪ ঘন্টায় ১টি সেবনই যথেষ্ট। এসকল ওষুধ রোজা পূর্বেই গ্রহণ করলে রোজাবস্থায় এর কার্যকারিতা শরীরে থাকলেও তাতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

টিকা (Vaccine): হজ্জ্বে যাওয়ার পূর্বে মেনিঞ্জাইটিস টিকা নেওয়ার একটি প্রচলন রয়েছে। এ টিকার মাধ্যমে শরীরে এন্টিজেন প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়, যা শরীরে এন্টিবডি তৈরী করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। রোজা রেখে যে কোন টিকা গ্রহণেই রোজা ভেঙ্গে যাবে।

এক্সরে (X-ray): রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্সরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। রোজাবস্থায় এক্সরে করালে রোজা ভাঙ্গবে না কিনা, সে ব্যাপারে আলোচনার পূর্বে এক্সরে নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সাধারণতঃ সাধারণ অবস্থায় ইলেক্ট্রোডের মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি প্রবাহিত হয় না। কিন্তু যখন চাপ ০.০১ থেকে ০.০০১ মিঃমিঃ পর্যন্ত কমিয়ে আনা হয়, এদের বলা হয় ক্যাথোড রে। এই ক্যাথোড রে প্রবাহের সময় সামনে ধাতব জিনিস ধরা হয় তখন খুব ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় রশ্মি নির্গত হয়, যে রশ্মির শরীর ভেদ করে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, একেই বলা হয় এক্সরে।
দেখা গেছে, সূর্য্যরশ্মি যদি গ্লাসের প্রিজমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো যায় তবে যে রকম বর্নালী দেখা দেয়, তেমনি পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইডের ক্রিষ্টাল সল্টের মধ্য দিয়ে এক্সরে পরিচালনা করলে একই রকমের বর্ণালী দেখা দেয়। মূলতঃ সূর্য্যরশ্মির মতোই এক্সরে এক ধরনের রশ্মি। রোজাবস্থায় এক্সরে করালে রোজার কোন ক্ষতি হবে না। তেমনি ত্বকের অসুখের ক্ষেত্রে অনেক সময় UV-Exposure দেয়া হয় এতেও রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া (Blood Transfusion): রোজা রেখে রক্ত গ্রহণ করলে অবশ্যই রোজা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু রোজা রেখে কেউ রক্তদান করলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। কেননা প্রথম অবস্থায় রক্ত শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থায় রক্ত বের হয়েছে। শরীর থেকে সাধারণভাবে কিছু বের হলে রোজা ভঙ্গ হয়না, শরীয়তের উল্লিখুত বিষয়গুলো ছাড়া।

আকুপাংচার (Acupuncture): এ পদ্ধতিটি প্রথমে চীনে প্রচলন ঘটে। শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষত সেই সকল অংশে যেখানে শরীরের স্নায়ু রয়েছে, সেখানে এক প্রকার সূচ ফুটানো হয়, যাতে শরীরে এক ধরণের নিঃসরণ ঘটে। কিন্তু সূচের মধ্য দিয়ে শরীরে কিছু প্রবেশ করানো হয়না, সে কারণে আকুপাংচারে রোজা ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা নেই।

আল্ট্রাসনোগ্রাম (Ultrasonogram): আল্ট্রাসনোগ্রাম পদ্ধতিতে শরীরে এক ধরণের শব্দ তরঙ্গ পাঠানো হয় এবং তা পুণরায় ধারণ করে, তার প্রতিক্রিয়া পর্দায় দেখা হয়। সুতরাং এতে রোজা নষ্ট হবেনা এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পূর্বে যে জেলটি শরীরে লাগানো হয়, তা পানি দ্রাব্য এবং তা মস্তিস্কে বা পেটে পৌঁছায় না। সুতরাং সে জেলেও রোজা ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা নেই।

এন্ডোস্কপি (Endoscopy): এন্ডোস্কপিতে একটি নল বা পাইপ পেটে মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ভিতরের অবস্থা দেখা হয়। সুতরাং নলটি যদি পাকস্থলী স্পর্শ করে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে কিন্তু নলটি যদি পাকস্থলী স্পর্শ করার পূর্বে বের করে আনা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না।

নাক-কান ছিদ্র করাঃ রোজাবস্থায় কেউ যদি গহনা পরিধানের জন্য নাক, কান ছিদ্র করে, তবে রক্ত বের হলেও রোজা ভঙ্গ হবে না কিন্তু তাতে যদি মলম লাগানো হয় (Ointment -যেগুলোতে ওষুধ রিয়েছে) তবে রোজা ভঙ্গ হবে।

দাঁত তোলা (Teeth Extraction): রোজা রেখে, লোকাল এনেসথেসিয়া ছাড়া দাঁত তুললে রোজা ভঙ্গ হবে না, তবে যদি কিছু পরিমাণ রক্ত ভিতরে যায় রোজা ভঙ্গ হবে। কিন্তু লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে দাঁত তুললে রোজা ভঙ্গ হবে।

ইনসুলিন গ্রহণঃ এমন অনেক রোগী আছেন, যারা রোজা না রাখার মতো অসুস্থ নন কিন্তু রোজা রাখার সামর্থ্য থাকলেও ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। যেমন- ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন। সেক্ষেত্রে ইনসুলিন গ্রহণের সময়সীমা পরিবর্তন করে সুফল পাওয়া যাবে। কিন্তু রোজা রেখে ইনসুলিন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে।

রেডিও থেরাপী (Radio Therapy): রেডিও থেরাপী দেয়া হয়, সাধারণতঃ দু’টি প্রধান পদ্ধতিতে-
(১) টেলি থেরাপী (Tele Therapy),
(২) ব্রেকি থেরাপী (Brscy Therapy)।
এ দু’টো পদ্ধতিতে বিশেষতঃ দু’টি রে ব্যবহৃত হয়- গামা রে (γ-Ray) এবং বিটা রে (β-Ray)। রেডিও থেরাপীতে যে সকল রেডিও একটিভ পদার্থ ব্যবহৃত হয়, তাদের মধ্যে কোবাল্ট-৬০, সিজিয়াম-১৩৭, রেডিয়াম, ইররিডিয়াম, ষ্ট্রনিয়াম, ফসফরাস, ইট্রিয়াম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। রেডিও থেরাপী এক্সরে প্রয়োগের মাধ্যমেও দেয়া হয়। তবে সেখানে অনেক উচ্চ মাত্রার এক্সরে প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিতে রে ব্যবহৃত হয় বলে রেডিও থেরাপী প্রয়োগে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

মেডিসিনাল প্যাচ (Medicinal Patch): মেডিসিনাল প্যাচ সাধারণতঃ বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্ন উপাদানের তৈরী হয়ে থাকে। মাথা ব্যাথা, বুকের ব্যাথা, বাতের ব্যাথা এ সকল রোগের জন্য বিভিন্ন রকমের প্যাচ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি প্যাচ নিয়ে আলোচনা করা যাক।

বুকের ব্যাথাঃ- বুকের ব্যাথায় অনেক সময় হৃৎপিন্ডের কৌশিক নালী (Blood Capillary) সংকুচিত হলে সেখানে রক্ত সঞ্চালন কম হয়, ফলে ব্যাথা উঠে। সে ক্ষেত্রে আইসোসরবাইড ডাই-নাইট্রেট প্যাচ ব্যবহার করলে ব্যাথা কমে যায়। রক্তে ওষুধের শোষণ না হলে এটা সম্ভব নয়।

বাতের ব্যাথাঃ- বাতের ব্যাথায় ব্যালাডোনা প্লাস্টার (Belladonna Plaster) যা বাতের ব্যাথা এবং আরো বিভিন্ন কারণে ব্যবহৃত হয়। ব্যালাডোনা প্লাস্টারে আরো লেখা আছে “Aganist Pleurisy, Bronchitis, Cough, the affections of the throat, chest, lungs, etc. 1 or 2 plasters as the case requires are used.”
সুতরাং এ সকল প্যাচ ব্যবহারে রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে। তাই যদি জানা যায়,কোন প্যাচ ব্যবহারে রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে, তবে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যদি জানা যায় রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে না তাহলে রোজা ভাঙ্গবে না। কিন্তু মূলতঃ প্যাচ এ কারণেই দেয়া হয়, যাতে ধীরে ধীরে রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে।

স্প্রে (Spray): বাজারে বিভিন্ন রকমের স্প্রে পাওয়া যায়। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন রকম স্প্রে ব্যবহৃত হয়। হঠাৎ ব্যাথা পেলে ব্যাথা অংশে স্প্রে করলে ব্যাথা কমে যায়। এ সকল স্প্রেতে সাধারণতঃ ব্যাথানাশক উপাদান (Pain KIller Materials) থাকে। কিন্তু কিছু স্প্রে ব্যবহৃত হয় ঘাম কমিয়ে আনার জন্য, এগুলো ব্যবহারে ঘর্মগ্রন্থি (Sweet Gland) সংকুচিত হয়ে আসে এবং ঘামের পরিমাণ কমে যায়। এছাড়াও রয়েছে এরোসল স্প্রে (Aerosol Spray) যা চেতনানাশকের (Anaesthesia) জন্য ব্যবহৃত হয়। সুতরাং যদি জানা যায়,কোন স্প্রে ব্যবহারে ওষুধ রক্তে পৌঁছে তবে সে ধরণের স্প্রে ব্যবহারে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যে সকল স্প্রে ব্যবহারে রক্তে উপস্থিতি পাওয়া যাবেনা, সেরকম স্প্রে ব্যবহারে রোজার কোন ক্ষতি হবে না। শুধু সুগন্ধি স্প্রে (Perfume Spray) শরীরের ত্বকের কোন অংশে দিলে যদি তার প্রবেশের কোন যোগ্যতা না থাকে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা অনেক স্প্রের ক্ষেত্রেই উদ্বায়ী পদার্থ (Volatile Substance) থাকাতে সেটা শরীরের ত্বকে প্রবেশের পূর্বেই উড়ে যায়।
মূলকথা হলো- রক্তে যে সকল ওষুধের শোষণ ঘটে, ঐ সকল ওষুধ ব্যবহারে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, কারণ রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটলে তা অবশ্যই মগজে পৌঁছে যায়।

অসুস্থতার কারণে রোজা না রাখার হুকুমঃ একটি বিষয় খুবই লক্ষনীয়, তাহলো- কারো যদি রোজাবস্থায় দিনের বেলায় ইঞ্জেকশন নেওয়ার খুব বেশী প্রয়োজন পড়ে, তবে তার জন্য রোজা না রাখার হুকুম তো শরীয়তে রয়েই গেছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেন-
“আর যদি কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হয়, তবে অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করবে।”

এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অসুস্থতার কারণে, মুসাফির সফরে কারণে অথবা কারো রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হলো, অনূরূপ শরয়ী কোন ওজরের কারণে যদি কেউ রমজান মাসের রোজা না রাখে এবং অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করে নেয়, তবে কি সে রমজান মাসের ন্যায় ফযীলত লাভ করতে পারবে?
তার জবাবে বলতে হয়- হ্যাঁ, কেউ যদি অসুস্থতার কারণে, সফর অথবা শরয়ী যেকোন ওজরের কারণে রমজান মাসের রোজা রাখতে না পারে এবং অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করে নেয়, তবে সে রমজান মাসের ন্যায় সকল ফাযায়িল-ফযীলত হাছিল করতে পারবে। কারণ শরীয়তের কোথাও উল্লেখ নেই যে, এরূপ ব্যক্তি রমজানের ফাযায়িল-ফযীলত হাছিল করতে পারবে না। বরং হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ওজর অথবা রোগ ব্যতীত রমজান মাসের একটি রোজা ভঙ্গ করবে, সে যদি তার পরিবর্তে সারা বছরও রোজা রাখে। তবেও ওটার সমকক্ষ হবে না।” (আহ্‌মদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনে মাযাহ্‌)

এ প্রসঙ্গে আরো বলা যেতে পারে যে, যেমন- মেয়েদের অসুস্থতা (হায়েজ-নেফাস)-এর সময় নামাজ পড়া ও রোজা রাখা নিষিদ্ধ। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর রোজা কাজ্বা করতে হয় কিন্তু নামাজ কাজ্বা করতে হয় না। এর কারণ কি?
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
“হযরত মুয়াজাহ্‌ আদভিয়া তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আয়িশা সিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হায়েজগ্রস্থা স্ত্রীলোক রোজা কাজ্বা করে কিন্তু নামাজ কাজ্বা করে না, এর কারণ কি? তখন হযরত আয়িশা সিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, যখন আমরা এ অবস্থায় পৌঁছাতাম, তখন আমাদেরকে রোজা কাজ্বা করার আদেশ দেওয়া হতো কিন্তু নামাজ কাজ্বা করার আদেশ দেওয়া হতো না।” (মুসলিম শরীফ)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- যে সকল মেয়েরা অসুস্থতার কারণে নামায পড়তে পারেনা এবং রমজান মাসে কিছু সংখ্যক রোজা রাখতে পারলোনা, তবে কি তারা উক্ত নামাযের ফযীলত ও রমজান মাসের রোজার ফযীলত হতে মাহরূম থাকবে? জবাবে বলা যায়-কখনোই নয় বরং সে নামায ও রোজার পরিপূর্ণ ফযীলতই লাভ করবে। কারণ সে শরীয়তের দৃষ্টিতে মাজুর।
অনুরূপ কারো যদি ওযু অথবা গোসলের প্রয়োজন হয় কিন্তু যদি পানি পাওয়া না যায়, তবে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে, এখানে পানি দ্বারা ওযু-গোসল করে নামায আদায় করলে যে ফযীলত সে লাভ করতো তায়াম্মুম দ্বারা নামায পড়লে সে ততটুকু ফযীলত লাভ করবে।
এমনিভাবে ই’তিকাফকারী সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“ই’তিকাফকারী সম্পর্কে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে ব্যক্তি মুলতঃ সকল গুনাহ হতে বিরত এবং সকল নেক আমলের ফযীলত তাকেও দান করা হবে।”
অর্থাৎ ই’তিকাফকারী মসজিদে আবদ্ধ থাকার কারণে বাইরের যে নেক কাজগুলো করতে পারেন না, সে সকল নেক কাজের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়ে থাকে।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, যারা ওজরবশতঃ বা অসুস্থতার কারণে রমজান মাসের রোজা রাখতে পারবে না, তারা অন্য সময় উক্ত রোজাগুলো আদায় করলে অবশ্যই রমজান মাসের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা অর্থাৎ ফাযায়িল-ফযীলত লাভ করতে পারবে। বরং অনেক ক্ষেত্রে উল্লিখিত অবস্থায় রোজার মধ্যেই বরং কোন ফায়দা বা সাওয়াব নেই।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু বর্ণনা করেন, একবার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে ছিলেন, একস্থানে লোকের ভীড় দেখলেন, (সেখানে গিয়ে দেখলেন) এক ব্যক্তির উপরে ছায়া দেওয়া হচ্ছে। (এটা দেখে) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে কি? লোকেরা বললো- (যাকে ছায়া দেওয়া হচ্ছে) সে একজন রোজাদার, (তখন) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সফরে রোজা রাখা সাওয়াবের কাজ নয়।” (বুখারী, মুসলিম)

অতএব, কেউ যদি ওজরবশতঃ রমজান মাসে রোজা রাখতে না পারে, তবে সে তা অন্য সময় ক্বাজা আদায় করলেও রমজান মাসের ন্যায় ফযীলত লাভ করবে।
জেনে হোক অথবা না জেনে হোক রোজাবস্থায় যারা ইঞ্জেকশন নিয়েছে, তাদের উক্ত রোজা অবশ্যই কাজ্বা করতে হবে, তবে কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হবে না।

উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ও ফিক্বাহের অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সারগর্ভ আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন। এ দ্বীন পালন করতে গিয়ে আমরা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্ট সকল সমস্যার সমাধানই কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্‌মা ও ক্বিয়াসের মধ্যে রয়েছে।

মোটকথা হলো- উত্তমভাবে গবেষণা ও তাহক্বীক্ব করার পর এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইঞ্জেকশন ইত্যাদি মগজে পৌঁছে থাকে, আর শরীয়তের উসুল হলো- ওষুধ ইত্যাদি মগজ বা পেটে পৌঁছালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইমামদের মত হলো- ওষুধ ইত্যাদি মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করা শর্ত নয় বরং যে স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন, যদি তা মগজ বা পেটের যে কোন একটির ভিতর প্রবেশ করার ব্যাপারে কোন সন্দেহ না থাকে, তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। সুতরাং ইঞ্জেকশন সম্পর্কে সঠিক রায় হলো- “রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ইঞ্জেকশন দ্বারা ব্যবহৃত ওষুধ নিশ্চিতভাবে মগজে পৌঁছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্যসূত্রঃ
(১) The theory and practice of Industrial Pharmacy. (Chapter: Biopharmaceuties & Semisolids)
By Leon Lachman, A. Lieberman Herbert and L. Kanig Joseph
(২) Guyton’s medical Physiology
(৩) Remington’s Pharmaceutical Sciences
by Joseph P. Remington
(৪) Goodman & Gilman’s the Pharmacological Basis of Therapeutics
by Joel Griffith Hardman, Lee E. Limbird, Alfred G. Gilman
(৫) Cummingham’s manuals of practical anatomy
By Cunningham, D. J. (Daniel John), ; Robinson, Arthur,
(৬) Martindale’s Extra Pharmacopoeia
Ed J E F Reynolds Royal Pharmaceutical Societ

মহা সম্মানিত পবিত্র আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সুমহান বেমেছাল শান-মান মর্যাদা ফযীলত মুবারক জানা শুনা এবং সে অনুযায়ী আমল করা প্রত্যেক ঈমানদার বান্দা-বান্দী উনাদের জন্য ফরযে আইন

মহা সম্মানিত পবিত্র আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সুমহান বেমেছাল শান-মান মর্যাদা ফযীলত মুবারক জানা শুনা এবং সে অনুযায়ী আমল করা প্রত্যেক ঈমানদার বান্দা-বান্দী উনাদের জন্য ফরযে আইন

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক করেন-

قل لا اسئلكم عليه اجرا الا الـمودة فى القربى
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।” (পবিত্র সূরা শুরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
انـما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا.
অর্থ: নিশ্চয়ই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি চান হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে অর্থাৎ উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি করেছেন। (সুবহানাল্লাহ!) (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان الله و ملائكته يصلون على النبى يا ايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থ: নিশ্চয়ই খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। কাজেই হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নূরানী শান মুবারকে দরূদ শরীফ পাঠ করো এবং সালাম দেয়ার যথার্থ নিয়মে সালাম দাও। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পবিত্র তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে-
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত কা’ব বিন উজরাতা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন- ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কিভাবে আপনার মুবারক শানে দুরূদ শরীফ পাঠ করবো? তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুরূদে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে সরাসরি পাঠ করে শুনিয়েছেন। যথা-
اللهم صل على سيدنا محمد وعلى آل سيدنا محمد كما صليت على سيدنا ابراهيم وعلى آل سيدنا ابراهيم انك حميد مجيد. اللهم بارك على سيدنا محمد وعلى آل سيدنا محمد كما باركت على سيدنا ابراهيم وعلى آل سيدنا ابراهيم انك حميد مجيد.
উল্লেখ্য যে, বর্ণিত পবিত্র দুরূদে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে সাধারণভাবে পবিত্র নামাযের মধ্যেই পাঠ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাহলে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই পবিত্র নামায উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাথে উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস উনাদের শানেও দুরূদ শরীফ পাঠ করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।
অর্থাৎ হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর দুরূদ শরীফ পাঠ না করলে নামায পূর্ণরূপে আদায় হয় না অর্থাৎ উনাদের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ পবিত্র ইবাদত ও দোয়া পরিপূর্ণ ও কবুল হওয়ার প্রধান উসীলা। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- হে হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম! আপনাদের মর্যাদা-বুযুর্গী সম্মান কতইনা ঊর্ধ্বে! কতই-না উত্তম! যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের উপর দুরূদ শরীফ পড়া না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কারো নামাযও কবুল হয় না।
হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন-
ان كان رافضا بحب آل رسول الله صلى الله عليه وسلم، فليشهد الثقلين انى رافضى.
অর্থ: যদি হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করার কারণে মানুষ আমাকে রাফিজী বলে, তবে আসমান-যমীন সাক্ষী থাকুক যে, আমি রফিজী। (হিলইয়াতুল আউলিয়া)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং মুবারক বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ করাকে ঈমানদার বান্দা-বান্দী তথা উম্মতের জন্য আবশ্যক বা ফরয-ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
এছাড়া স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব আল্লাহ পাক তিনিও হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক শানে সালাম পেশ করেছেন। আমভাবে কালামুল্লাহ শরীফ উনার অসংখ্য পবিত্র আয়াত শরীফে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে সালাম পেশ করার বর্ণনা এসেছে। যেমন-
سلام على ابراهيم (عليه السلام)، سلام على موسى وهارون (عليهما السلام)، سلام على نوح فى العالمين (عليه السلام)، سلام على المرسلين (عليهم السلام).
পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমনিভাবে উপরোল্লিখিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সালাম মুবারক জানিয়েছেন, তেমনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও সালাম জানিয়েছেন।
যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
سلام على الياسين.
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন-
سلام على آل ياسين.
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপরে সালাম। (পবিত্র সূরা আছছফাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩০)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انى تركت فيكم ما ان اخذتم به لن تضلوا كتاب الله وعترتى و اهل بيتى.
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তোমাদের জন্য যা রেখে গেলাম তা তোমরা গ্রহণ করলে কখনোই গুমরাহ হবে না; তা হচ্ছেন পবিত্র কিতাবুল্লাহ এবং আমার সম্মনিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। (তিরমিযী শরীফ, জামিউছ ছগীর)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت ابى ذر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الا ان مثل اهل بيتى فيكم مثل سفينة حضرت نوح عليه السلام من ركبها نجا و من تخلف عنها هلك.
অর্থ: হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সাবধান! নিশ্চয়ই আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মেছাল মুবারক হলো হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতি মুবারকের ন্যায়। যিনি তাতে আরোহণ করেছেন তিনি নাজাত পেয়েছেন; আর যে খিলাফ করেছে (আরোহণ করেনি) সে ধ্বংস হয়েছে।” (মুসনাদুল বাজ্জার শরীফ, মুস্তাদরাক শরীফ, ত্ববারানী শরীফ) নাউযুবিল্লাহ!
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
احبوا اهل بيتى لـحبى.
অর্থ: আমার সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বতে। (তিরমিযী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
انا واهل بيتى شجرة فى الجنة واغصانها فى الدين فمن تمسك دينا اتخذ ربه سبيلا.
অর্থ: আমি এবং আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হলাম পবিত্র জান্নাত উনার গাছ উনার ন্যায়। সম্মানিত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে শাখা-প্রশাখা রয়েছে। যে সম্মানিত দ্বীন উনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সঠিক পথ দান করবেন। সুবহানাল্লাহ!
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت على عليه السلام قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ادبوا اولادكم حب نبيكم وحب اهل بيته و قرائة القرآن والحديث.
অর্থ: তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক শিক্ষা দাও। তাদেরকে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরকে তিলাওয়াত করার শিক্ষা দাও। (আল ফাতাওয়াল হাদীসিয়্যাহ শরীফ, জামিউছ ছগীর লিছছুয়ূতী)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم حب آل محمد صلى الله عليه وسلم يوما خير من عبادة سنة ومن مات عليه دخل الجنة.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “একদিন (বা একমুহূর্ত) সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা সারা বছর পবিত্র ইবাদত-বন্দেগী করার চেয়েও উত্তম। আর যে উনাদের পবিত্র সম্মানিত মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো, সে পবিত্র জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
عن حضرت جابر بن عبد الله البجلى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من مات على حب آل محمد صلى الله عليه وسلم مات شهيدا. الا ومن مات على حب محمد صلى الله عليه وسلم مات مغفورا له.
অর্থ: হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহিল বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; সে শহীদী মৃত্যু পেলো। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; সে অবশ্যই ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় ইন্তেকাল করলো।
الا من مات على حب ال محمد صلى الله عليه وسلم مات مؤمنا مستكمل الايمان.
অর্থ: সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; সে পরিপূর্ণ ঈমানওয়ালা মু’মিন অবস্থায় ইন্তেকাল করলো। সুবহানাল্লাহ!
من مات على حب آل رسول الله صلى الله عليه وسلم بشره حضرت ملك الـموت عليه السلام بالجنة ثم منكر ونكير عليهما السلام.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; উনাকে হযরত মালাকুল মউত, মুনকার এবং নাকীর আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র বেহেশত উনার সুসংবাদ দিবেন।
من مات على حب آل رسول الله صلى الله عليه وسلم يزف الى الجنة كما تزف العروس الى بيت زوجها.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে পবিত্র জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে নবদুলহানকে সাজিয়ে বাসর ঘরে নেয়া হয়। (তাফসীরুল কাশশাফ, তাখরীজু আহাদীসিল কাশশাফ, লিজযায়লায়ী)
আর যারা সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান মর্যাদা-সম্মান মুবারক রক্ষা করবে না, বরং উনাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ রাখবে; তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন হয়েছে কাট্টা কাফির ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহ আলাইহির উপর। বর্তমানে সেই লা’নতপ্রাপ্ত ইয়াযীদের অনুসারী হচ্ছে খারিজী ফিরক্বা, ওহাবী, দেওবন্দী, সালাফী, মওদুদী, জামাতী, তাবলীগী, লা-মাযহাবী। সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মান, বেমেছাল ইজ্জত সম্মান মুবারক শুনলে তাদের শরীরে আগুন লেগে যায়। নাউযুবিল্লাহ!
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-
من مات على بغض آل محمد صلى الله عليه وسلم جاء يوم القيامة مكتوبا بين عينيه ايس من رحمة الله.
অর্থ: যদি কেউ সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হিসেবে মারা যায়, তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তার লা’নতপ্রাপ্ত কপালে লিখা হবে- ‘এই ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রহমত থেকে নিরাশ/বঞ্চিত।’ (নাঊযুবিল্লাহ)
من مات على بغض آل محمد صلى الله عليه وسلم مات كافرا.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হিসেবে মারা যায়, সে কাফির অবস্থায় মারা গেলো। (নাঊযুবিল্লাহ)
من مات على بغض آل محمد صلى الله عليه وسلم لم يشم راحة الجنة.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হিসেবে মারা যায়, সে পবিত্র বেহেশত উনার সুঘ্রাণও পাবে না।
من ابغض اهل البيت فهو منافق.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে মুনাফিক (আর মুনাফিকের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে)। (তাফসীরুল কাশশাফ, তাখরীজু আহাদীসিল কাশশাফ লিজযায়লয়ী)
এদের সম্পর্কে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
لو ان رجلا صعد بين الركن والمقام فصلى وصام ثم مات وهو مغبض لأهل بيت محمد صلى الله عليه وسلم دخل النار.
অর্থ: যদি কোনো ব্যক্তি সম্মানিত রুকনে ইয়ামিন ও পবিত্র মাক্বামে ইবরাহীমে আরোহণ করে অতঃপর সে নামায পড়ে এবং রোযা রাখে কিন্তু সে সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করে, চু-চেরা ক্বীল-ক্বাল করে তবে সে নিশ্চিত জাহান্নামে প্রবেশ করবে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, কায়িনাতবাসী সকলের জন্যই ফরয ওয়াজিব হচ্ছে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম করা, উনাদের খিদমত মুবারক করা এবং উনাদের বিরোধিতা বা বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে বিরত থাকা। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার মর্যাদা হলো- পবিত্র শবে ক্বদর, শবে বরাতসহ সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাতের চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি

পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার মর্যাদা হলো- পবিত্র শবে ক্বদর, শবে বরাতসহ সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাতের চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون.

অর্র্থ: “আয় আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমগ্র কায়িনাতবাসীকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সে জন্য তারা যেন যথার্থভাবে তা’যীম (টাকা-পয়সা, মাল-জান কুরবানীর মাধ্যমে) সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বা খুশি প্রকাশ করে তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে। আর এই সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বা খুশি প্রকাশ করাই হবে সবকিছু থেকে সর্বত্তোম, যা কিছু তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে থাকে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : আয়াত শরীফ ৫৮)

পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফই হচ্ছেন- খুশি প্রকাশের রাত। সুবহানাল্লাহ!  رغائب  (রগায়িব) শব্দটি رغيب  এর বহুবচন। যার অর্থ কাঙ্খিত বিষয়, প্রচুর দান। (মিছবাহুল লুগাত-২৯৮)

পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থে যেই রাতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র ও মহা সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ কুদরতীভাবে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন সেই মহান রাতকে ‘পবিত্র লাইলাতুর রাগায়িব’ বলা হয়।

হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছাম্ম মাস উনার প্রথম জুমুয়া উনার রাতটি গাফলতির সাথে অতিবাহিত করো না। কারণ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ওই রাতটিকে পবিত্র ‘লাইলাতুর রগায়িব’ নামে আখ্যায়িত করেছেন।”

আর ওই রাতটি যখন এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয় তখন আসমান-যমীনে যত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আছেন সবাই পবিত্র কা’বা শরীফ এবং উনার আশপাশে উপস্থিত হন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সম্বোধন করে বলেন, ‘হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনাদের যা ইচ্ছা তা প্রার্থনা করতে পারেন। আমি অবশ্যই কবুল করবো।’ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তখন বলেন, ‘হে মহান আল্লাহ পাক! আমাদের প্রার্থনা এই যে, যারা পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছাম্ম মাস উনার মধ্যে রোযা রাখবে তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন।’ তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।’ সুবহানাল্লাহ! (গুনিয়াতুত ত্বলিবীন ৩৩১)

হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব, “বারাহীনুল ক্বতইয়াহ ফী মাওলিদী খাইরিল বারীয়াহ” নামক কিতাবে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, এ মুবারক রাত্রির ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হাম্বলী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি যখন ফতওয়া করলেন, ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব’ শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাত অর্থাৎ পবিত্র শবে ক্বদর, পবিত্র শবে বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রি অপেক্ষা লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। (সুবহানাল্লাহ!) তখন সমসাময়িক ইমাম ও ফক্বীহগণ উনার নিকট জানতে চাইলেন, হে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! লাইলাতুল ক্বদর এবং লাইলাতুল বরাত উনাদের ফযীলত সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন। কিন্তু ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনার ফযীলত সম্পর্কে কোথাও বর্ণনা করা হয়নি। তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে ফতওয়া দিলেন যে, পবিত্র ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনার ফযীলত উক্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রিগুলো অপেক্ষাও বেশি? হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জবাবে বলেন, পব্রিত লাইলাতুল ক্বদর ও পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনাদের ফযীলত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে সত্যিই; কিন্তু লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রির সৃষ্টি হয়েছে পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার উসীলায়। অর্থাৎ ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ না হলে ‘লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাতসহ’ ফযীলতপূর্ণ কোনো রাত্রির সৃষ্টিই হতো না। এ কারণেই উক্ত রাত মুবারক উনার ফযীলত সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রির চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ!

হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘বারাহিনুল ক্বতইয়াহ ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ’ উনার ৭৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করেছেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে যে, এই রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের জগতে নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন যে, পবিত্রতম নূর মুবারক দ্বারা সারা কায়িনাত (জগৎ) আলোকিত করে দাও। তাই আসমান-যমীনের সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহাখুশিতে বিভোর হয়ে গিয়েছিলেন। সর্বোত্তম জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউস উনার মুবারক দরজা খুলে দেয়ার জন্য জান্নাতের দ্বাররক্ষী হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সারা কায়িনাতকে বিভিন্ন প্রকার খুশবু দ্বারা সুগন্ধিযুক্ত করার হুকুম ছিল। আকাশের সব স্তরে এবং পৃথিবীর সব ঘরে ঘরে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, “নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ মুবারক রাতে উনার সম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম উনার মহা পবিত্র ও মহা সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করবেন। কারণ তিনি সবকিছুর মূল। অর্থাৎ উনাকে উপলক্ষ করে সারা কায়িনাতের সবকিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তিনি সমস্ত নূর মুবারক ও গুপ্ত রহস্যাবলীসহ সমস্ত রহমত, বরকত, মাগফিরাত সাকীনা, সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা, হাক্বীক্বত, মা’রিফাত, মুহব্বতসহ সমস্ত কিছু জাহির বা প্রকাশিত হওয়ার মূল উৎস। গোটা সৃষ্টি জগৎ উনার মুবারক অজুদ পাক বা মুবারক অস্তিত্ব হতে সৃষ্টি হয়েছে এবং যিনি সমস্ত কিছুর মূল। তিনি অচিরেই দুনিয়াতে মুবারক তাশরীফ নিবেন। সারা কায়িনাতকে তিনি সম্মান-মর্যাদা দ্বারা খুশি ও আনন্দিত করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৯, সীরাতে ইবনে হিশাম, ১/১৪৫)

হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াতে তাশরীফ গ্রহণের দিন যেভাবে শয়তানগুলোকে আকাশে উঠার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, অনুরূপ পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ এবং ঊষাকালে সকল মূর্তি উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।

পবিত্র ‘লাইলাতুর রগায়িব’ শরীফ উনার মধ্যে অসংখ্য-অগণিত আশ্চর্যজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো।-

(১) দুনিয়ার এমন কোনো বাদশাহের সিংহাসন ছিলো না, যা ওই রাতে উল্টিয়ে পড়েনি।

(২) উক্ত রাতে প্রতিটি ঘর আলোকময় হয়েছিল।

(৩) সেই রাতে সমস্ত জীব-জন্তু কথা বলতে পেরেছিলো।

(৪) এমনকি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের পশু-পাখিরা পর্যন্ত খুশি ও সুসংবাদ বাণী পরস্পর বিনিময় করেছিলো। (আল বারাহীনুল ক্বতইয়াই ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ, ৭৯)

তিনি সেখানে আরো উল্লেখ করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার পূর্বে দুর্ভিক্ষের কারণে অনেকেই অভাবে কষ্ট ভোগ করছিল। বৃষ্টির অভাবে গাছের পাতাগুলো শুকিয়ে গিয়েছিলো। আর সমস্ত জীব-জন্তু এবং গৃহপালিত পশু-পাখিগুলো অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিলো।

কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার সাথে সাথে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল। মহান আল্লাহ পাক তিনি মুষলধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। রহমতের বৃষ্টি সকল গাছপালা, তৃণ লতাকে নতুনভাবে সবুজ ও তরুতাজা করে দিলো। সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৯, সীরাতে হালাবিয়া ১/৪৮, বারাহীনুল ক্বতইয়াহ ৮১, সীরাতে ইবনে হিশাম, ১/১৪৫)

হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘আল বারাহীনুল ক্বতইয়াই ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ’ কিতাবে আরো উল্লেখ করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “আমি সে সময় ঘুম ও জাগ্রতের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় একজন লোক এসে আমাকে সুসংবাদ জানালেন- সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত তথা রহমাতুল্লিল আলামীন আপনার মাঝে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। উক্ত ব্যক্তি আরো বললেন, আপনি মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব উনাকেই গ্রহণ ও ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

অপর বর্ণনায় এসেছে, সমস্ত সৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার স্থান উনাকেই আপনি গ্রহণ ও ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (আল বারাহিনুল ক্বতইয়াহ, ৮৪)

হযরত আবূ নাঈম ইস্পাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মাতা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক আনয়নের দিনের মুবারক নিদর্শন হচ্ছে এই যে, সেই রাত মুবারকে কুরাইশদের সমস্ত গৃহপালিত পশুগুলি একটি অন্যটির নিকট বলাবলি করেছিল যে, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার রব উনার কসম! তথা মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এই রাত মুবারকে এমন একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন; যিনি হচ্ছেন- সমস্ত কায়িনাতের ইমাম এবং দুনিয়াবাসী সকলের আলোর দিশারী তথা পথ প্রদর্শক। সুবহানাল্লাহ! (আল বারাহীনুল ক্বাতইয়াহ ৮৩)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংস্পর্শে যা কিছু এসেছেন সেটাও সবচেয়ে সুমহান হয়ে গেছেন। যেমন- সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একমত হয়েছেন অর্থাৎ ইজমা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পা মুবারক, শরীর মুবারক বা যে কোনো অংশ মুবারক উনার যা কিছু স্পর্শ মুবারকে এসেছেন; উনার প্রত্যেকটি বিষয়, বস্তু বা প্রতিটি জিনেসের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত পবিত্র আরশে আযীম উনার চেয়েও লক্ষ-কোটিগুণ সীমাহীন ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! প্রকৃতপক্ষে মাটি বা কোনো কিছুরই কোনো ক্বদর বা মূল্য ছিল না। শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক উনার কারণে পবিত্র আরশে আযীম উনার চেয়ে মূল্যবান, ফযীলতপূর্ণ ও সম্মানিত হয়েছেন।

যদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোনো কিছু স্পর্শ মুবারকে আসার কারণে স্বয়ং পবিত্র আরশে আযীম উনার চেয়ে বেশি মর্যাদাবান হয়ে যান; তাহলে পবিত্র নূরানী অজুদ পাক উনার সাথে যে বিষয়গুলি মিশে আছেন সেই বিষয়গুলির ফাযায়িল-ফযীলত যে কত বেশি তা সারা কায়িনাতের প্রত্যেক সৃষ্টিকুলের চিন্তা, ফিকিরের সীমাহীন ঊর্ধ্বে। তাইতো বলা হয়ে থাকে পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব মুবারক হচ্ছে- পবিত্র শবে ক্বদর, শবে বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাতের চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি ফযীলতপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ!

ঠিক একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান নূরানী অজুদ পাক মুবারক উনার সাথে ওৎপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাহিস সালাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মানও বে-মিছাল সীমাহীন ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা নিসা ৫৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উলীল আমর উনাদের ইতায়াত করো।” অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইতায়াত করাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ইতায়াত করা। আর যাঁরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণ ইতায়াত তথা অনুসরণ করেছেন (সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহ) উনাকে অনুসরণ করাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইতায়াত করা। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশ অনুযায়ী উলীল আমর তথা বর্তমান যামানার যিনি খাছ লক্ষ্যস্থল, আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে অনুসরণ করতে হবে। কারণ তিনিই একমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করেন। তাই বিশুদ্ধ আক্বীদায় উনাকে মুহব্বত করলে, উনার অনুসরণ করলে, উনার খিদমত মুবারক করলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করা হবে। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো- সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ সম্পর্কে জেনে যথাযথভাবে খুশি প্রকাশ করা। ২৭শে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ রাত মুবারকে তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নূরানী খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে উক্ত রাতকে পূর্ণ নিয়ামত দান করেন। সুবহানাল্লাহ! উক্ত মুবারক রাতে তাসবীহ-তাহলীল, দোয়া-দুরূদ, ছলাত-সালাম, যিকির-আযকার, তওবা-ইস্তিগফার, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ, ছদকা-খইরাত, নামায-কালাম পাঠ করে বেমিছাল নিয়ামত মুবারক হাছিল করে উনার শুকরিয়া আদায় করা সকল মুসলমান তথা কুল-কায়িনাতের জিন-ইনসানসহ সমস্ত মাখলুকাতের দায়িত্ব-কর্তব্য।

আর মুসলমান হিসেবে প্রত্যেক মুসলমান সরকারের তো অবশ্যই এমনকি গায়ের মুসলমান (অমুসলিম) সরকারেরও উচিত- ইসলামী ঐতিহ্য ও ফযীলতযুক্ত দিবসগুলোর মর্যাদা অনুধাবনে, নিয়ামত হাছিলে ও ফযীলত আহরণের সুবিধার্থে সেদিনগুলোতে সরকারিভাবে ছুটির দিন ঘোষণা করা।

প্রথম খলিফা , দ্বিতীয় খলিফা,তৃতীয় খলিফা, এবং চুতর্থ খলিফা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মুবারক শানে ইরশাদ মুবারক করেন

প্রথম খলিফা , দ্বিতীয় খলিফা,তৃতীয় খলিফা, এবং চুতর্থ খলিফা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মুবারক শানে ইরশাদ মুবারক করেন

  • প্রথম খলিফা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন

    قالالصديقاكبر عليهالسلاممنأنفقدرهماعلىقراءةمولدالنبىصلىاللهعليهوسلمكانرفيقىفىالجنة.

    যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে ব্যক্তি জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে। সুবহানাল্লাহ!

  • দ্বিতীয় খলিফা হযরত ফারূকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন

    .وقالعمرعليهالسلاممنعظممولدالنبىصلىاللهعليهوسلمفقداحياالاسلام

    যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলকে অর্থাৎ বিলাদত শরীফ দিবসকে বিশেষ মর্যাদা দিলো সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।

  • তৃতীয় খলিফা হযরত যূন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন

    .وقالعثمانعليهالسلاممنأنفقدرهماعلىقراءةمولدالنبىصلىاللهعليهوسلمفكانماشهدغزوةبدروحنين

    যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলো সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো। সুবহানাল্লাহ!

  • চুতর্থ খলিফা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম বলেন

    .وقالكرماللهوجههعليهالسلام وكرماللهوجههمنعظممولدالنبىصلىاللهعليهوسلموكانسببالقرائتهلايخرجمنالدنياالابالايمانويدخلالجنةبغيرحساب

    যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরি, মাটির তৈরি নন

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরি, মাটির তৈরি নন

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘নূরের তৈরি’ হিসেবে অস্বীকার করা এবং তার বিপরীত উনাকে মাটির তৈরি বলা এবং নূর ও মাটি দ্বারা তৈরি বলা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ ও অসংখ্য হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, অসংখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র নূরের তৈরি। সেজন্য বলা হয়, তিনি নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ তিনি আপাদমস্তক নূর। মাটির কোন অস্তিত্বই উনার মধ্যে নেই।

মহান আল্লাহ পাক “পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ” উনার ১৫ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

قد جاءكم من الله نور.

অর্থ: “নিশ্চয় তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ‘নূর’ এসেছেন।”

উল্লেখ্য, এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি “নূর” শব্দ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝিয়েছেন, যেহেতু তিনি আপাদমস্তক “নূর বা নূরের তৈরি।”

আর হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, উক্ত ‘নূর’ হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

যেমন ক্বাজিউল কুজাত হযরত ইমাম আবূ সউদ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইমাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মশহূর তাফসীর “তাফসীরে আবী সউদ”-এর ৩য় জিলদ ১৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-

(قد جاءكم من الله نور.) … الـمراد بالنور هو الرسول صلى الله عليه وسلم

অর্থ: বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি।”

এছাড়া আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই নিজেকে নূরের তৈরি বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انت بابى انت وامى اخبرنى عن اول شىء خلق الله تعالى قبل الاشياء قال يا جابر رضى الله تعالى عنه ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك.

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমাকে জানিয়ে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেন? তিনি বললেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক সবকিছুর পূর্বে আপনার নবী উনার নূর মুবারককে সৃষ্টি করেন।” মুসনাদে আব্দির রয্যাক, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রথম সৃষ্টিই হচ্ছেন উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক। আর উক্ত নূর মুবারক থেকেই মাটিসহ সবকিছুর সৃষ্টি হয়। তাহলে উনাকে মাটির সৃষ্টি বলা কিভাবে শুদ্ধ হতে পারে?

কাজেই, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বাশার, ইনসান বা মানুষ মাটির তৈরি বলতে একমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। আর অপর কাউকে নয়। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন-

واذ قال ربك للملئكة انى خالق بشرا من طين

অর্থ: “যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করবো মাটি দ্বারা।” (সূরা ছোয়াদ: আয়াত শরীফ ৭১)

“তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় জিঃ, ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(انى خالق بشرا من طين) يعنى ادم عليه السلام.

অর্থ: “(নিশ্চয়ই আমি সৃষ্টি করবো বাশার মাটি থেকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে।”

মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার যতো আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে ‘মানুষকে’ মাটির তৈরি বলা হয়েছে সে সকল আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লিখিত ‘মানুষ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন “হযরত আদম আলাইহিস সালাম।” কারণ শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত আর কেউই মাটি থেকে সৃষ্টি নন।

অতএব, প্রত্যেক মুসলমানকে এ আক্বীদাই রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ নূরের তৈরি, মাটির তৈরি নন। অথবা নূর ও মাটি মিশ্রিতও নন। উনাকে মাটির বা মাটি ও নূরের তৈরি বলা সুস্পষ্ট গুমরাহী ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

(বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকা উনার ফতওয়া বিভাগ “৬০তম থেকে ৮২তম” সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ২৪১টি পবিত্র কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীলসহ বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ৯৪তম ও ১৬২তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ দেখুন।)

রাজারবাগ দরবার শরীফে পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সারা বছর তথা আজীবনব্যাপী সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানিত মাহফিল মুবারক উনার ইন্তিযাম। সুবহানাল্লাহ!

রাজারবাগ দরবার শরীফে পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সারা বছর তথা আজীবনব্যাপী সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানিত মাহফিল মুবারক উনার ইন্তিযাম। সুবহানাল্লাহ!

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ, অভূতপূর্ব, বেমেছাল, সুমহান তাজদীদ মুবারক ‘হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ২৪ ঘণ্টা তথা দায়িমীভাবে সারা জীবন সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন এবং পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সারা বছর তথা আজীবনব্যাপী সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানিত মাহফিল মুবারক উনার ইন্তিযাম।
عِيْدُ مِيْلَادِ النَّبِىّ ِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (ঈদু মীলাদিন নাবিইয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার আভিধানিক অর্থ মুবারক হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিলাদত শরীফ উনার দিবস উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা। আর পারিভাষিক অর্থে- عِيْدُ مِيْلَادِ النَّبِىّ ِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (‘ঈদু মীলাদিন নাবিইয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’) হচ্ছেন, ‘সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বিলাদত শরীফ উনার দিবস উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা, ঈদ পালন করা, উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করা, উনার সম্মানিত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক আলোচনা করা, উনার প্রতি সম্মানিত ছলাত শরীফ ও সালাম মুবারক পেশ করা এবং তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করা, উনার পূত-পবিত্র সম্মানিত জীবনী মুবারক উনার সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা করা।’ সুবহানাল্লাহ!
আর সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু সমস্ত উম্মত, সমস্ত জিন-ইনসান, সমস্ত মাখলূকাত, সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য ‘সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ’
তাই মুজাদ্দিদে আ’যম পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি এই মহাসম্মানিত সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামকরণ মুবারক করেছেন, ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’ হিসেবে। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مّـِنْ رَّبّـِكُمْ وَشِفَاء لّـِمَا فِى الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لّـِلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـِمَّا يَـجْمَعُوْنَ.
“হে মানুষেরা! হে সমস্ত জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসী! অবশ্যই তোমাদের মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সর্বপ্রকার ব্যাধিসমূহের সর্বশ্রেষ্ঠ আরোগ্যদানকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ হিদায়াত দানকারী এবং সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য, খাছ করে ঈমানদারদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ রহমতস্বরূপ আমার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন। (সুবহানাল্লাহ)
হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমস্ত জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসীকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যে, ফযল, করম ও রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে, ঈদ পালন করে তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা, ঈদ পালন করাটা, মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাটা সবকিছু থেকে উত্তম; যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা ইউনূস শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ৫৮)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা প্রত্যেক মুসলমান, জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসীর জন্য ফরয করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে এখন বলার বিষয় হচ্ছে, এই মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ কতক্ষণ সময় ধরে পালন করতে হবে? এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّـاۤ اَرْسَلْنٰكَ شَاهِدًا وَّمُبَشّـِرًا وَّنَذِيْرًا. لِتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُعَـزِّرُوْهُ وَتُوَقّـِرُوْهُ وَتُسَبّـِحُوْهُ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا.
“নিশ্চয়ই আমি আমার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শাহিদ তথা (উপস্থিত, হাজির, নাযির) সাক্ষ্যদানকারী, সুসংবাদদানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে সৃষ্টি করেছি, প্রেরণ করেছি। যেন তোমরা ঈমান আনতে পারো মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি। অতএব, তোমরা যথাযথভাবে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দাও, উনার সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তথা দায়িমীভাবে অনন্তকাল যাবৎ উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো তথা উনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করো।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা ফাতহ শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ : ৮-৯)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত জিন-ইনসান ও কায়িনাতবাসীর জন্য উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে সকাল-সন্ধ্যা, দায়িমীভাবে অনন্তকাল মহাসম্মনিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার নির্দেশ মুবারক প্রদান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীকে নির্দেশ দেয়ার পূর্বেই তিনি নিজেই উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করার পর থেকে অদ্যবধি দায়িমীভাবে মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং অনন্তকাল যাবৎ মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতেই থাকবেন। (সুবহানাল্লাহ)
আর যখন থেকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন থেকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন। (সুবহানাল্লাহ)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُبَـىِّ بْنِ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّـِىْ أُكْثِرُ الصَّلٰوةَ عَلَيْكَ فَكَمْ اَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلٰوتِىْ فَقَالَ مَا شِئْتَ قُلْتُ اَلرُّبُعَ قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكَ. قُلْتُ اَلنّـِصْفَ قَالَ مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ قَالَ مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكَ قُلْتُ اَجْعَلُ لَكَ صَلٰوتِىْ كُلَّهَا قَالَ اِذًا تُكْفٰى هَمُّكَ وَيُكَفَّرُ لَكَ ذَۢنبُكَ .
অর্থ: “হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনার উপর বেশি বেশি ছলাত মুবারক পাঠ করতে চাই, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করতে চাই তথা আপনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে চাই। তাহলে আমি কী পরিমাণ সময় আপনার উপর ছলাত মুবারক পাঠ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো, আপনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবো? অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি কত ঘণ্টা আপনার উপর ছলাত মুবারক পাঠ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো তথা আপনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবো? আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা। আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ সময় তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টা আপনার উপর ছলাত মুবারক পাঠ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো, আপনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবো? আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা, আপনি করুন। তবে যদি এর চেয়ে বেশি সময় করেন, তাহলে তা আপনার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি অর্ধেক সময় তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা আপনার উপর ছলাত মুবারক পাঠ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো, আপনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবো? আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা, আপনি করুন। তবে যদি এর চেয়ে বেশি সময় করেন, তাহলে তা আপনার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি আমার তিন ভাগের দুই ভাগ সময় তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা আপনার উপর ছলাত মুবারক পাঠ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো, আপনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবো? আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা, আপনি করুন। তবে যদি এর চেয়ে বেশি সময় করেন, তাহলে তা আপনার জন্য উত্তম হবে। তখন আমি বললাম, তাহলে আমি আমার সম্পূর্ণ সময় তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৪ ঘণ্টাই আপনার উপর ছলাত মুবারক পাঠ করবো, আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো, আপনার মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবো? তখন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যদি আপনি এরূপ করতে পারেন, তাহলে আপনার সমস্ত নেক মাক্বছূদগুলো পূর্ণ করে দেয়া হবে এবং আপনার সমস্ত গুনাহখতাগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ ২/৪২১, শুয়াবুল ঈমন শরীফ ৩/১৩৮, মিশকাত শরীফ, জামিউল আহাদীছ শরীফ ৩২/৩৭৩, জামিউল উছূল শরীফ ১১/৮৪৬৭, রিয়াদুছ ছালিহীন ১/৩৪৭ ইত্যাদি)
মূলত: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ন ইত্তেবা করার মাধ্যমেই হাক্বীকী ভাবে উনার সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা সম্ভব।
নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ , হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরন প্রসঙ্গে, আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ ۖ إِنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থাৎ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ , হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা এনেছেন, তা আঁকড়িয়ে ধর, যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাক।
সুরা হাশর শরীফ: আয়াত শরীফ-৭
আর অনুসরনটা যে ২৪ ঘন্টা িএবং সারাজীবনব্যপী করতে হবে তা হযরত উবাই বিন ক্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত উপরোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে সুস্পষ্ট।

আল হালীমু, আল হাফীযু, আল হাইইয়ু, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক ছাড়া ঈমানের কালিমা অপূর্ণ

আল হালীমু, আল হাফীযু, আল হাইইয়ু, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক ছাড়া ঈমানের কালিমা অপূর্ণ

হান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ করেন,

انما المؤمنون الذين امنوا بالله ورسوله

অর্থ: “নিশ্চয়ই প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান উনারাই যাঁরা আল্লাহ তায়ালা ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উপর ঈমান এনেছেন।” (সূরাতুন নূর : আয়াত শরীফ ৬২)

আল্লাহ রব্বুল আলামীন তিনি সূরা আলে ইমরান-এর ১৭৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন-

فامنوا بالله ورسله وان تؤمنوا وتتقوا فلكم اجر عظيم.

অর্থ: “তোমরা আল্লাহ তায়ালা ও উনার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর ঈমান আনো। যদি তোমরা ঈমান আনো এবং ভয় করো, তাহলে তোমাদের জন্য মহা পুরস্কার রয়েছে।”

আয়াত শরীফদ্বয়ে ঈমানের জন্য আল্লাহ পাক উনার সাথে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিও ঈমানকে শর্ত করা হয়েছে। মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক ছাড়া ঈমানের কালিমা অপূর্ণ অর্থাৎ উনার নাম মুবারকই ঈমানের কালিমার মূল। সুবহানাল্লাহ!

মনে রাখতে হবে, ১ লক্ষ ২৪ হাজার, মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণও ঈমান। তবে উনাদেরও ঈমান আমাদের নবী ও রসূল সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!

বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ-এ বর্ণিত আছে-

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بنى الاسلام على خمس شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه وسلم واقام الصلوة وايتاء الزكوة والحج وصوم رمضان.

অর্থ: ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, দ্বীন ইসলাম মৌলিক পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। (১) এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ বা মা’বূদ নেই আর সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক উনার আবদ (হাবীব, নবী) ও রসূল (২) ছলাত (নামায) কায়িম করা (৩) যাকাত আদায় করা (৪) হজ্জ করা (৫) রমাদ্বান মাসে রোযা রাখা।” সুবহানাল্লাহ!

মু’মিন-মুসলমানগণের ঈমান ও আক্বীদার মূল কালিমা শরীফ হলো-

لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক ছাড়া কোনো ইলাহ বা মা’বূদ নেই, সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালা উনার  রসূল।”

কিন্তু বর্তমান এই আখিরী যামানায় দেশে-বিদেশে কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল ওহাবী খারিজী সালাফী আত্মপ্রকাশ করেছে, যারা বলে কালিমা শরীফ-এ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক সংযুক্ত করা ঠিক নয়, কেননা এ বিষয়ে সরাসরি হাদীছ শরীফ-এর কোনো বর্ণনা নেই। নাঊযুল্লিাহ!

মিথ্যাবাদী দাজ্জাল ওহাবী, খারিজী, সালাফী জাহিল ফিতনাবাজ উলামায়ে ছূ’ ও তাদের অনুসারীদের বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরী ও গুমরাহীমূলক। কারণ ঈমানের কালিমা শরীফ-

لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

হুবহু এভাবেই হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে।  নিম্নে এ সম্পর্কিত দুইখানা হাদীছ শরীফ পূর্ণ ছহীহ সনদ, মতন ও অর্থসহ উল্লেখ করা হলো,

১ম হাদীছ শরীফ

حدثنا على بن حمشاد العدل املاء ثنا هرون بن العباس الهاشمى ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصارى حدثنا سعيد بن ابى عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال اوحى الله الى عيسى عليه السلام يا عيسى امن بمحمد صلى الله عليه وسلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لا محمد صلى الله عليه وسلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلى الله عليه وسلم ما خلقت الجنة والنار ولقد خلقت العرش على الماء فاضطرب فكتبت عليه لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم فسكن. فاذا حديث صحيح الاسناد.

(الـمستدرك على الصحيحين للحاكم النيسابورى كتاب تواريخ المتقدمين ذكر اخبار سيد المرسلين وخاتم النبين محمد بن عبد الله بن عبد المطلب المصطفى صلوات الله عليه وعلى اله الطاهرين الجلد ۴ الصفحة ۱۵۸۳ محتصر المستدرك الجلد ۲ الصفحة ۱۰۶۷)

অর্থ: “হযরত ইমাম হাফিয আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ হাকিম নীসাবূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত হারূন বিন আব্বাস হাশিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত জানদাল বিন ওয়ালিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আমর বিন আউস আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

সনদ পরিবর্তন: হযরত ইমাম হাফিয আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ হাকিম নীসাবূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তনি হযরত ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে।

তিনি হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম! আপনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে যাঁরা উনাকে পেতে চায় তাঁদেরকে নির্দেশ করুন, উনারা যেনো উনার প্রতি ঈমান আনে। যদি রসূলুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টি না হতেন, তাহলে হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে তৈরি করতাম না। আমি যখন পানির উপর আরশ তৈরি করলাম তখন তা টলমল করছিলো, যখনই আরশের মধ্যে

لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।” (সুবহানাল্লাহ)এই হাদীছ শরীফখানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ।

(আল মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকিম আননীসাবূরী-কিতাবু তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন-যিকরু আখবারি সাইয়্যিদিল মুরসালীন ওয়া খাতামিন নাবিইয়ীন মুহম্মদ বিন আব্দিল্লাহ বিন আব্দিল মুত্তালিবিল মুছত্বফা ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইহি ওয়া আলা আলিহিত ত্বাহিরীন ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুসতাদরাক ২য় খ- ১০৬৭ পৃষ্ঠা)

২য় হাদীছ শরীফ

حدثنا ابو سعيد عمرو بن محمد بن منصور العدل ثنا ابو الحسن محمد بن اسحاق بن ابراهيم الحنظلى ثنا ابو الحارث عبد الله بن مسلم الفهرى ثنا اسماعيل بن مسلمة انبأ عبد  الرحمن بن زيد بن أسلم عن ابيه عن جده عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما افترى ادم عليه السلام الخطيئة قال يارب اسألك بحق محمد صلى الله عليه وسلم لـما غفرت لى فقال الله يا ادم عليه السلام وكيف عرفت محمدا صلى الله عليه وسلم ولـم اخلقه؟ قال يا رب لـما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت رأسى فرأيت على قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم فعلمت أنك لـم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك فقال الله صدقت يا ادم عليه السلام انه لاحب الخلق الى ادعنى بحقه فقد غفرت لك ولو لا محمد صلى الله عليه وسلم ما خلقتك. هذا حديث صحيح الاسناد.

(الـمستدرك على الصحيحين للحاكم النيسابورى كتاب تواريخ المتقدمين ذكر اخبار سيد المرسلين وخاتم النبين محمد بن عبد الله بن عبد المطلب المصطفى صلوات الله عليه وعلى اله الطاهرين الجلد ۴ الصفحة ۱۵۸۳. الصحيحة ۱/۸۸. مختصر المستدرك ۲/۱۰۶۹. التوسل (۱۱۵). تفسير الدر المنثور ۱/۵۸. كنز العمال ۱۱/۴۵۵)

অর্থ: “হযরত ইমাম হাফিয আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ হাকিম নীসাবূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবু সাঈদ আমর বিন মুহম্মদ বিন মানছূর আদল রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবুল হাসান মুহম্মদ বিন ইসহাক বিন ইবরাহীম হানযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবুল হারিছ আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম ফাহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইসমাঈল বিন মাসলামাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত আব্দুর রহমান বিন যায়িদ বিন আসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা থেকে, তিনি উনার দাদা থেকে, তিনি ছাহাবী হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি বলেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া কবুলের সময় হলো। তখন তিনি দোয়া করলেন, হে আমার রব! আমি আপনার কাছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় প্রার্থনা করছি। অতএব, আমার দোয়া কবুল করুন। আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনলেন, অথচ এখনো উনাকে দুনিয়ায় প্রেরণ করিনি? জবাবে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার রব! আপনি যখন আমাকে আপনার কুদরতী হাত মুবারক-এ তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেন, তখন আমি আমার মাথা উত্তোলন করে আরশের খুঁটিসমূহে লিখিত দেখতে পাই-

لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

‘আল্লাহ পাক ব্যতীত কোনো ইলাহ বা মাবূদ নেই সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনার রসূল।’ তখন আমি বুঝতে পারলাম আপনার নাম মুবারক-এর সাথে যাঁর নাম মুবারক সংযুক্ত আছে তিনি সৃষ্টির মধ্যে আপনার সবচেয়ে মুহব্বতের হবেন। আল্লাহ পাক বললেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি ঠিকই বলেছেন, কারণ তিনি সৃষ্টির মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে মুহব্বতের। হযরত আদম আলাইহিস সালাম বললেন, আয় আল্লাহ পাক! উনার উসীলায় আমার দোয়া কবুল করুন। আল্লাহ পাক বললেন, আমি আপনার দোয়া কবুল করলাম। যদি আমার হাবীব মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন তাহলে আমি আপনাকেও তৈরি করতাম না।” সুবহানাল্লাহ! এ হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ।

(আল মুসতাদরাক আলাল ছহীহাইন লিল হাকিম আননীসাবূরী-কিতাবু তাওয়ারিখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারি সাইয়্যিদিল মুরসালীন ওয়া খাতামিন নাবিইয়ীন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবিল মুস্তফা ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইহি ওয়া আলা আলিহিত ত্বাহিরীন ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, আছ ছহীহাহ ১ম খ- ৮৮ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুস্তাদরাক ২য় খ- ১০৬৯ পৃষ্ঠা, আত তাওয়াসসুল ১১৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরুদ দুররিল মানছূর লিছ ছূয়ূত্বী ১ম খ- ৫৮ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল ১১ খ- ৪৫৫ পৃষ্ঠা।)

কুরআন শরীফ ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কেউ যদি ক্বিয়ামত পর্যন্ত শুধু

لا اله الا الله

‘আল্লাহ পাক ব্যতীত কোনো ইলাহ বা মা’বূদ নেই’ বলে বিশ্বাস করে সে কখনোই ঈমানদার হতে পারবে না, বরং কাফির ও চির জাহান্নামী থেকেই যাবে। যতোক্ষণ পর্যন্ত না সে

محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

‘হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনার রসূল’ এ বাক্যকে মনে প্রাণে মেনে না নিবে। অর্থাৎ মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈমানী পূর্ণ কালিমা হচ্ছে-

لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

অর্থাৎ “আল্লাহ পাক ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আর সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত রসূল।”

মূলকথা হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক মু’মিন-মুসলমানের ঈমানের মূল। উনার নাম মুবারক ছাড়া ঈমানের কালিমা অপূর্ণ।

আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী মুহব্বত মা’রিফত যিয়ারত ও শাফায়াত নছীব করুন। আমীন।

সংগৃহিত: http://www.al-baiyinaat.net/1175.html

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোষ্ট টা পড়ে যদি আপনার ভাল লাগে তা হলে অব্যশয় কমেন্ট বক্স এ আপনার মতামত জানাবেন এবং শেয়ার করবেন।✤ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ✤ মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত উনার আক্বিদা পোষন করা এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক বুজ দান করুন। আমিন।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সুন্নতি সামগ্রীর অনুকরণে কিছু সুন্নতি সামগ্রীর ছবি (সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসহ)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সুন্নতি সামগ্রীর অনুকরণে কিছু সুন্নতি সামগ্রীর ছবি (সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসহ)

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব)

আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলেদিন, যদি তারা আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত লাভ করতে চায় তাহলে তারা যেনো আপনার অনুসরণ করে, তাহলে আমি আল্লাহ পাক স্বয়ং তাদেরকে মুহব্বত করবো, তাদেরকে ক্ষমা করবো, তাদের প্রতি দয়ালু হবো; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সুরা আল ইমরান ৩১)

সুন্নতের ফযীলত সম্পর্কে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহব্বত করলো, সে মূলতঃ আমাকেই মুহব্বত করলো। আর যে আমাকে মুহব্বত করবে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।” (তিরমিযী শরীফ)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আখিরী যামানায় যে ব্যক্তি একটি সুন্নত আঁকড়ে ধরে থাকবে তথা আমল করবে তাকে এর বিনিময়ে একশত শহীদ এর ছওয়াব প্রদান করা হবে।

সুন্নতি পাগড়ি মুবারক:

b1cd9d12d66537a02ca15f22b7e94a47_xlarge

পাগড়ীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা পাগড়ী মোবারক পরিধান করতেন। তিনি ঘরেও পাগড়ী মোবারক পরিধান করতেন। মক্কা শরীফ বিজয়ের সময়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মোবারক-এ কাল পাগড়ী মোবারক ছিল। উনার পাগড়ী মুবারক-এর নিচে এবং পাগড়ী মুবারক ব্যতীত শুধু টুপিও ব্যবহার করেছেন।

ফজিলত: পাগড়ী সম্বন্ধে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “মানুষ যখন পাগড়ী পরা ছেড়ে দিবে, তখন তাদের থেকে দ্বীন চলে যাবে।”
অন্যত্র ইরশাদ ফরমান, “পাগড়ী বাঁধ, যা ইসলামের নিদর্শন, মুসলমান ও কাফেরদের মধ্যে পার্থক্যকারী।”
পাগড়ী পরে নামাজ পড়লে ৭০ গুণ বেশী সওয়াব লাভ করা যায়। (শামায়েলে তিরমিযী, সিহাহ্ সিত্তাহ্, মিরকাত, মাদারেজুন নুবুওওয়ত, সিরাতুন নবী, জামউল ওসায়েল ইত্যাদি।

পরিমাপ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় যে পাগড়ী মোবারক ব্যবহার করতেন তা ছিল সাত হাত লম্বা। ঘরের মধ্যে ব্যবহার করতেন তিন হাত এবং ঈদ, জুমুয়া ও দূতদের জন্যে ব্যবহার করতেন ১২ হাত লম্বা পাগড়ী মোবারক। (আদাবুন নবী)
রং: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালো, সবুজ, সাদা, ধূসর ইত্যাদি বিভিন্ন রংয়ের পাগড়ী মোবারক পরিধান করতেন। তবে কালো পাগড়ী মোবারকই বেশী ব্যবহার করতেন। (শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল ও সীরত গ্রন্থসমূহ)
সিমলা: সিমলা ১ বিঘত থেকে ১ হাতের মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং তা দু’কাঁধের মধ্যখানে ঝুলিয়ে রাখা উত্তম। তবে কখনো বা সম্মুখ ভাগের ডান দিকে ঝুলিয়ে রাখাও দুরস্ত আছে।

(শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল)

পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারেসুন্নতী কোর্তার বর্ননা

Sunnoti Korta Mubarak

‘ক্বমীছ’ শব্দের তাহক্বীক্বী অর্থ ও ‘ক্বমীছ’-এ সঠিক পরিচয়

قميص ক্বমীছ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো- কোর্তা, জামা, ক্বমীছ ইত্যাদি। আর ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় ক্বমীছ বা কোর্তা হলো, যার গেরেবান আছে যা বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী লাগানো হয় যা নিছফুস্ সাক্ব। অর্থাৎ হাটু ও পায়ের গিরার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত বিলম্বিত। গোল যা কোনা ফাঁড়া নয়, যার আস্তিন আছে, যা অতি সহজেই মানুষের সতর ও ইজ্জত আবরু ঢাকে।

মুহাদ্দিছুশ্ শাহীর, ফক্বীহুন্ নাবীল, আল্লামা আলী বিন সুলতান মুহম্মদ ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ” কিতাবে, হযরত আল উস্তাযুল আল্লাম, ফাযীলাতুশ্ শাইখ, মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রীস কান্দুলুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ’-এর ‘লিবাস’ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,

القميص اسم لما يلبس من المخيط الذى له كمان وجيب، وقيل وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء من الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن او لابسه اكثر تواضعا.
অর্থ: “ক্বমীছ বা কোর্তা হলোঃ যা সিলাই করে পরিধান করা হয়, যার দু’টি আস্তিন ও একটি গেরেবান আছে। বলা হয়, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ক্বমীছ সর্বাধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা লুঙ্গি ও চাদর অপেক্ষা শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আবৃতকারী। তাছাড়া তা অল্প খরচে তৈরি হয়। শরীরের পক্ষে হালকা ও আরামদায়ক এবং এর পরিধানকারীর মধ্যে অনেক বিনয় নম্রতার প্রকাশ ঘটে।”

সুন্নতি টুপি মুবারক :

38e4e38f7f0851a7f6ba315e55b3f6b4_xlarge

টুপির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:মহান আল্লাহ্ পাক, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে জান্নাত হতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে টুপি মুবারক পরিধান করার জন্য হাদীয়া করেছিলেন, তা ছিল চার টুকরা বিশিষ্ট এবং গোল। এর উপরিভাগে এক টুকরা এবং চারদিকে তিন টুকরা দ্বারা বেষ্টিত, যা সাদা, সূতী এবং মাথার সাথে লেগে থাকে। তা পরিধান করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (দলীল: তিরমিযী, মেশকাত, মেরকাত, ইসরারুল আওলিয়া, আনিসুল আরওয়াহ্, দলিলুল আরেফীন)

টিকা: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো কিস্তি, পাঁচ কুল্লি, চোক্কা বা উঁচু টুপি পরিধান করেননি।
এমনকি এর পক্ষে কেউ কোন প্রমাণও পেশ করার যোগ্যতা রাখে না এবং এসব টুপি পরিধান করা মাকরূহ্।
(আলমগীরী, এতাবীয়া)

গুটলি বিশিষ্ট, কোনা বন্ধ সুন্নতি কোর্তা মুবারক:

হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নেছ্ফুসাক্ব বা কোর্তা মোবারক পরিধান করতেন, যা হাঁটু ও গিরার মাঝামাঝি পর্যন্ত লম্বা ছিল এবং আস্তিন কব্জি পর্যন্ত বিলম্বিত। তা গুটলি যুক্ত, কোনা বন্ধ (গোল)। তিনি সাদা এবং (মিশরীয়) সূতী বেশী পছন্দ করতেন। তবে অন্যান্য রংয়ের কোর্তাও পরিধান করতেন।(বোখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ ও নাসাঈ শরীফ)

টিকা – হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে কখনো কোনা ফাঁড়া কোর্তা বা পাঞ্জাবী পরিধান করেননি।
যা বর্তমান কালের অনেক আলেম নামধারী লোকেরা পরে থাকে। মূলতঃ এটা দলীল-প্রমাণবিহীন, স্রেফ মনগড়া আমল মাত্র। এমনকি তিনি কখনো গেঞ্জিও পরিধান করেননি।

কালো রং-এর সুন্নতি জুব্বা মুবারক:

08adb377df24e55e804efa7a8c7044d4_xlarge

হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদ, জুমুয়া এবং বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে জুব্বা মোবারক পরিধান করতেন। যার জেব এবং আস্তিনের উপর এমন কি নিম্নাংশেও সুক্ষ্ম রেশমের কারুকার্য ছিল।
(তিরমিযী, আবূদাউদ শরীফ ও সীরত গ্রন্থসমূহ)

টিকা: আল্লাহ্র হাবীব, হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় মুজিব কোর্ট, ওয়েষ্ট কোর্ট, শেরওয়ানী ইত্যাদির প্রচলন ছিলনা, এগুলো স্পষ্টতই বিদ্য়াতের অন্তর্ভূক্ত।

সুন্নতি চিরুনী মুবারক:

4e92a8469551eaedb7b6c5ea3f1bcfad_xlarge

                      হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া উনার ব্যবহৃত চিরুনী মুবারক ছিল হাতির দাঁত বা হাড় দ্বারা তৈরী।

3b9ebd13371848ac5955c21a67658755_xlarge

                                                       মেশক মিশ্রিত খাছ সুন্নতি ছমিদ সুরমা:

সুন্নতি বালিশ মুবারক:

425e925ba2a2ccae72ee42931dbe5b63_xlarge

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বালিশ মোবারক ছিল চামড়ার। ভিতরে তুলার পরিবর্তে খেজুরের পাতা ও ছোবড়া ভর্তি ছিল। (সীরত গ্রন্থসমূহ)

কাঠের তৈরী সুন্নতি প্লেট, বাটি, পেয়ালা, নিমকদানী ও চামড়ার তৈরী দস্তরখানা:

d2fd3e35029f695484ef66cc61ad2e87_xlarge

পান পাত্র মোবারক: হযরত সাবেত রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন- হযরত আনাস ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি লোহার পাত লাগানো কাঠের মোটা একটি পাত্র দেখিয়ে বললেন, ওহে সাবেত, এটা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পান পাত্র মোবারক। (তিরমিযী, শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল)
দস্তরখান মোবারক: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দস্তরখান মুবারক ছিল চামড়ার এবং তা হাল্কা লাল (খয়েরী) রংয়ের ছিল। (শামায়েলে তিরমিযী, আনিসুল আরওয়াহ্, জামউল ওসায়েল)
পেয়ালা মোবারক: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি এ (উপরে বর্ণিত) পেয়ালা (পান পাত্র) দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পান করার যাবতীয় বস্তু যেমন- পানি, নাবীয, মধু এবং দুধ পান করিয়েছি। খাওয়ার বাসন (পেয়ালা) বলতে ছিল- লোহার পাত যুক্ত কাঠের একটি পেয়ালা। (শামায়েলে তিরমিযী,জামউল ওসায়েল)

জয়তুন ও পিলু গাছের ডালের তৈরি খাছ সুন্নতি মিছওয়াক:

1d7e4329ee2044c784678791653726c9_xlarge

শাল, সেগুন, শীল কড়ই কাঠে তৈরী সুন্নতি চকি মুবারক:

daed78cc0757e69cdaa085734f1bad8b_xlarge

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার চকি মুবারক ছিল চার পায়া বিশিষ্ট এবং কাঠের তৈরী। এছাড়াও চারপায়া ছিল দড়ির তৈরী, যার ফলে কখনো কখনো দেহ মোবারকে দাগ পড়ে যেত।
পরিমাপ: একাকী ব্যবহারের জন্যে সাড়ে চার হাত লম্বা ও আড়াই হাত চওড়া এবং আরেকটি সাড়ে চার হাত লম্বা এবং প্রায় সাড়ে তিন হাত চওড়া ছিল। (সীরাতুন নবী, এবং আরো অন্যান্য সীরত গ্রন্থসমূহ)

ঝাউ কাঠের তৈরি সুন্নতি মিম্বর শরীফ ও খেজুর গাছের তৈরি লাঠি মুবারক

mimbar-shareef

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাঠের তৈরি মিম্বর শরীফ-এ বসে নছিহত শরীফ পেশ করতেন এবং জুমুয়া বারে খুতবা দেয়ার সময় খেজুর গাছের কাঠ দ্বারা নির্মিত লাঠি মুবারক ব্যবহার করতেন। যা স্বীয় কাঁধ মুবারক পর্যন্ত বিলম্বিত ছিল। (আবূ দাউদ, গায়াতুল আওতার, মুহীতে সারাখ্সী এবং সীরত গ্রন্থসমূহ)

চামড়ার খয়েরি রঙের সুন্নিত মোজা

46719df20894ae2376a58c682b5fe1c3_xlarge

চামড়ার খয়েরি রঙের ক্রস ফিতা বিশিষ্ট নালাইন শরীফ (সেন্ডেল):

6b87bdea7c21682d37f68b56bca02970_xlarge

 

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’ফিতা বিশিষ্ট চামড়ার জুতা (স্যান্ডেল বা নালাইন শরীফ) পরিধান করতেন। (শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল, আদাবুন নবী) অর্থাৎ উনার জুতা (স্যান্ডেল) মোবারক ছিল দু’ফিতা যুক্ত (ক্রস বেল্ট), যা সম্পূর্ণ (তলা’ও) চামড়ার দ্বারা নির্মিত এবং তা লাল-খয়েরী রংয়ের ছিল।

মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি রেযামন্দি সহজে হাছিল করতে হলে প্রত্যেককেই সুন্নতের গুরুত্ব ও ফাযায়িল-ফযীলত উপলব্ধি করে তা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে পালন করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন।

সংগৃহিত

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোষ্ট টা পড়ে যদি আপনার ভাল লাগে তা হলে অব্যশয় কমেন্ট বক্স এ আপনার মতামত জানাবেন এবং শেয়ার করবেন।✤ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ✤ মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত উনার আক্বিদা পোষন করা এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক বুজ দান করুন

সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে ঈদ কয় দিন? সবচেয়ে বড় ঈদ কোন দিন??? যারা বলে শরীয়তে দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব

সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে ঈদ কয় দিন? সবচেয়ে বড় ঈদ কোন দিন??? যারা বলে শরীয়তে দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব

সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে ঈদ কয় দিন? 

সবচেয়ে বড় ঈদ কোন দিন???

যারা বলে শরীয়তে দুই  ঈদের বেশি ঈদ নাই তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব-পর্ব-১

সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী মু’মিনগণ উনাদের জন্য বছরে ঈদের দিন বা খুশির দিন হলো-জুমুয়ার দিন শুক্রবার ৫০দিন, সোমবার শরীফ ৫০দিন, আরাফার ১দিন, ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ১দিন, ঈদুল ফিতর ১দিন, ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ৩দিন, ফরয রোযার ২৯ বা ৩০ দিন, সুন্নত রোযার৪২ দিন সর্বমোট ১৭৭ বা ১৭৮ দিন। অর্থাৎ বছরের প্রায় অর্ধেক দিনই মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈদ বাখুশির দিন।
Continue reading “সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে ঈদ কয় দিন? সবচেয়ে বড় ঈদ কোন দিন??? যারা বলে শরীয়তে দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব”

“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে সম্মানিত ইসলাম।”

“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে সম্মানিত ইসলাম।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে সম্মানিত ইসলাম।” অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলামই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট একমাত্র মনোনীত, হক্ব, পরিপূর্ণ ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত দ্বীন। অথচ তারপরও মুসলমানগণ সম্মানিত ইসলাম উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করে না। Continue reading ““নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে সম্মানিত ইসলাম।””

আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে যারা মুহব্বত ও তা’যীম-তাকরীম করবে উনারাও নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে যারা মুহব্বত ও তা’যীম-তাকরীম করবে উনারাও নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘নিশ্চয়ই আমার হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতী মুবারক উনার অনুরূপ। উনার মধ্যে যাঁরা আরোহণ করেছিল উনারা নাজাত পেয়েছিল।’ অর্থাৎ আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে যারা মুহব্বত ও তা’যীম-তাকরীম করবে উনারাও নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! সুমহান বরকতময় পবিত্র ১৯শে রবীউছ ছানী শরীফ- আওলাদে রসূল হযরত নিবরাসাতুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস; যা এ বছরের জন্য আগামী ১১ তাসি’-১৩৮২ শামসী সন, ০৯ ফেব্রুয়ারি-২০১৫ ঈসায়ী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ।
হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত জুযয়ে ঈমান। তাই প্রত্যেকের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম ও খিদমত মুবারক করে ইহকাল ও পরকালে নাজাত লাভ করা।যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ‘পবিত্র মুসলিম শরীফ’ ও ‘পবিত্র মিশকাত শরীফ’ কিতাব উনাদের বরাত দিয়ে বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তোমাদের জন্য দুটি নিয়ামত রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কিতাব। যার মধ্যে রয়েছে হিদায়েত ও নূর।
তোমরা পবিত্র কিতাবুল্লাহ উনাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরো।” তিনি পবিত্র কিতাবুল্লাহ উনার প্রতি উৎসাহ প্রদান করলেন। অতঃপর বললেন, “দ্বিতীয়টি হলো, আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম বা (আওলাদগণ) বংশধরগণ। উনাাদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি। উনাদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি।” অর্থাৎ হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত হচ্ছে জুযয়ে ঈমান। সুবহানাল্লাহ! আওলাদে রসূল হযরত নিবরাসাতুল উমাম আলাইহাস সালাম অর্থাৎ রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত শাহযাদী ছানী আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস পবিত্র ১৯শে রবীউছ ছানী শরীফ উপলক্ষে এক আলোচনা মজলিসে তিনি এসব ক্বওল শরীফ উল্লেখ করেন। মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যাঁরা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বংশের বা উনাদের আওলাদ উনারাই আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি এ প্রসঙ্গে পবিত্র তাফসীরে আহমদ শরীফ ও পবিত্র ইবনে কাছির শরীফ উনাদের বরাত দিয়ে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মুসলমান ব্যক্তির অন্তরে পবিত্র ঈমান দাখিল হবে না (হাক্বীক্বীভাবে ঈমানদার হবে না) যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য আমার বংশধর হওয়ার কারণে কুরাইশ উনাদেরকে মুহব্বত না করবে।” মনে রাখতে হবে যে, হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সকলেই কুরাইশ উনার অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত হচ্ছে জুযে ঈমান। সুবহানাল্লাহ! মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ‘পবিত্র সিররুশ শাহাদাতাইন শরীফ’ কিতাব উনার বরাত দিয়ে বলেন, হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খুছুছিয়ত, মর্যাদা, মর্তবা, বৈশিষ্ট্য ও ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই আমার হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উদাহরণ হলো- হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতী মুবারক উনার ন্যায়। যে উনার মধ্যে প্রবেশ করেছে (অর্থাৎ যে আমার আওলাদ উনাদেরকে মুহব্বত করেছে) সেই নাজাত পেয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! সেজন্যই অতীতের সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও ওলীআল্লাহ উনারা সকলেই হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে প্রাণ উজাড় করে মুহব্বত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এ সম্পর্কে ইমামুল আইম্মাহ, ইমামুল আ’যম, হাকীমুল হাদীছ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারক উনার একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একবার তিনি একস্থানে বসে স্বীয় ছাত্রদেরকে দর্স দিচ্ছিলেন। দর্স প্রদানরত অবস্থায় তিনি কিছুক্ষণ পর পরই দর্স বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন। যখন দর্স শেষ হলো, তখন ছাত্ররা প্রশ্ন করলো, হে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! বেয়াদবী ক্ষমা করবেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আপনি বারবার দর্স বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন, এর পিছনে কি কারণ রয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন যে, তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, আমাদের দর্সগাহের পাশেই কিছু ছোট ছেলেরা দৌড়াদৌড়ি করছিল। তন্মধ্যে অমুক ছেলেটি বারবার আমার নিকটবর্তী হলেই আমি দাঁড়িয়ে যেতাম। ছাত্ররা জানতে চাইলো, সেই ছোট ছেলেটি আপনার নিকটবর্তী হলে কেন দাঁড়িয়ে যেতেন? তখন ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন যে, দেখ, সেই ছেলে তিনি আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর। উনার সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক অর্থাৎ নূরুন নাজাত মুবারক উনার সম্পর্ক রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! সেজন্য যখনই তিনি আমাদের দর্সগাহের নিকটবর্তী হয়েছেন তখনই আমি উনার সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছি। কেননা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম ও সম্মান প্রদর্শন করা জুযয়ে ঈমান তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মূলকথা হলো- আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত জুযয়ে ঈমান। তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম ও খিদমত করে ইহকাল ও পরকালে নাজাত লাভ করা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি মুবারক হাছিল করা।

Continue reading “আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে যারা মুহব্বত ও তা’যীম-তাকরীম করবে উনারাও নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!”

১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ মহাপবিত্র, মহাসম্মানিত ও মহাফযীলতপূর্ণ দিন হিসেবে কায়িনাতে সাব্যস্ত হয়েছে এবং থাকবে।

১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ মহাপবিত্র, মহাসম্মানিত ও মহাফযীলতপূর্ণ দিন হিসেবে কায়িনাতে সাব্যস্ত হয়েছে এবং থাকবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ফযল-করম এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্য তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সবকিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুবারক তাশরীফ আনার কারণেই ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ মহাপবিত্র, মহাসম্মানিত ও মহাফযীলতপূর্ণ দিন হিসেবে কায়িনাতে সাব্যস্ত হয়েছে এবং থাকবে। আজ সেই মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র দিন। যা কুল-কায়িনাতের সকলের জন্যই- সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অর্থাৎ সৃষ্টিকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন। তাই কুল-কায়িনাতের সকলের জন্যই ফরয হচ্ছে, সর্বোচ্চ তা’যীম-তাকরীম, মুহব্বত ও ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার দিনটি পালন করা। আর সকল দেশের সরকারের জন্য ফরয হচ্ছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ আয়োজনে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা।

Continue reading “১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ মহাপবিত্র, মহাসম্মানিত ও মহাফযীলতপূর্ণ দিন হিসেবে কায়িনাতে সাব্যস্ত হয়েছে এবং থাকবে।”

বিশ্ব কুদরতময় কিন্তু কোন কিছুই নিয়ম বহির্ভূত নয়

আমরা স্থূল জগতের বাসিন্দা। আমরা যা কিছু দেখে থাকি সব কিছু কি বুঝি? সৃষ্টি জগতে সব কিছুই মহান আল্লাহ পাক যিনি খালিক মালিক রব উনার কুদরত। মানুষকে মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সামান্য ইলম/জ্ঞান দান করেছেন তা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত বুঝা সম্ভব না। এ অঞ্চলের মানুষ ভাত খায়। ভাত তাদের প্রধান খাদ্য। কিন্তু ১টি ধান থেকে কি ভাবে অনেক ধান হয় সে কুদরত কি কোন বৈজ্ঞানিকের জানা। একটি ধানের বীজের মধ্যে ধানের সকল গুণাবলি সময়সীমা ইত্যাদি থাকে কিন্তু এ রহস্য কি মানুষ বের করতে পারছে? এটা কুদরতে মাওলা উনার অধিন। আমরা রহস্যের মধ্যেই বিরাজমান। তবে সাধারণত: যদি তিনটি জগৎ আমরা ধরি (ক) স্থূল (খ) সুক্ষ্ম (গ) সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম। তিন জগতের নিয়ম নীতি আলাদা ও তিন রকম। প্রত্যেক জগতই সুনির্দিষ্ট নিয়ম নীতির অধিনে চলে। নিয়মবহির্ভূত কিছুই এই বিভিন্ন জগৎ সমূহে নাই। যদিও আমাদের জ্ঞান বুদ্ধি খুবই কম, তবুও মহান আল্লাহ পাক তিনি ফিকিরের নির্দেশ মুবারক দিচ্ছেন। আমরা হয়তো সঠিক বিষয় নাও বুঝতে পারি কিন্তু মহান আল্লাহ পাক যিনি খালিক্ব মালিক রব উনার মহত্ব, বিশালত্ব ও শ্রেষ্টত্ব আমাদের কাছে কিছুটা হলেও প্রকাশ পেতে পারে। এই মহাবিশ্বে কেহ কোন অনিয়ম দেখাতে পারবে না।

http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=2&textid=14248

মহাসম্মানিত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ ও আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।” (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩) Continue reading “মহাসম্মানিত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ ও আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা।”

মুসাল্লামাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহে উমরী মুবারক (১৪)

মুবারক খিদমতে খাদিম হাদিয়া:

উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে উনার সমস্ত সম্পদ হাদিয়া করেছেন, এমনকি উনার পছন্দের খাদিমকেও মুবারক খিদমতে হাদিয়া করেছেন। কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
كان حكيم بن حزام بن خويلد رضى الله تعالى عنه قدم من الشام برقيق ، فيهم زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه فدخلت عليه عمته خديجة بنت خويلد عليها السلام وهي يومئذ عند رسول الله صلى الله عليه وسلم ، فقال لها : اختاري يا عمة أي هؤلاء الغلمان شئت فهو لك ؛ فاختارت زيدا رضى الله تعالى عنه فأخذته ، فرآه رسول الله صلى الله عليه وسلم عندها ، فاستوهبه منها ، فوهبته له ، فأعتقه رسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থ: (উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ভাতিজা) হযরত হাকিম ইবনে হিজাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শাম দেশ হতে কয়েকজন গোলাম খরিদ করে নিয়ে আসলেন। উনাদের মধ্যে হযরত যায়েদ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ভাতিজা হযরত হাকিম ইবনে হিজাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট গেলেন। উনাকে দেখে হযরত হাকিম ইবনে হিজাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে আমার ফুফু! (শাম দেশ হতে ক্রয় করে আনা) আমার গোলামগণ উনাদের মধ্য হতে যাকে আপনি পছন্দ করেন, উনাকে আপনি গ্রহণ করুন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত যায়েদ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পছন্দ করলেন এবং খাদিম হিসেবে নিয়ে আসলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যায়েদ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখে উনার ব্যাপারে আগ্রহ মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত যায়েদ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাদিয়া মুবারক করলেন। অতঃপর, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যায়েদ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আজাদ করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ। (সীরাতে নববী লিইবনে হিশাম)

পবিত্র হেরা গুহায় মুবারক যাতায়াত:

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আযম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলতানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনি বয়স মুবারক যখন প্রায় চৌত্রিশ তখন থেকে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী পবিত্র হেরা গুহা বা জাবালে নূর উনার মধ্যে যেয়ে মুরাকাবা-মুশাহাদা মুবারক করতেন। সেখানে একাধারা কয়েকদিন পর্যন্ত অবস্থান করতেন। কখনও কখনও সাথে খাদ্য মুবারকও নিয়ে যেতেন। আবার কখনও খাদ্য মুবারক শেষ হয়ে গেলে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি স্বয়ং নিজেই খাদ্য মুবারক সেখানে পৌঁছে দিতেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর যখন যমীনি বয়স মুবারক চল্লিশ হলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক ও রিসালত মুবারক উনাদের কথা প্রকাশার্থে ‘পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ’ উনার প্রথম পাঁচখানা আয়াত শরীফ নাযিল করেন।” (তরজমায়ে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম)
হেরা গুহা সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
يقع غار حراء إلى الشرق من مدينة مكّة المكرمة في أعلى جبل يُدعى جبل النور. ارتفاع هذا الغار يزيد على ৬৩০ متراً، أمّا بعده عن مكّة المكرّمة ( المسجد الحرام تحديداً ) فيقدّر بحوالي أربعة كيلو مترات،
অর্থ: পবিত্র হেরা গুহা পবিত্র মক্কা শরীফ শহর উনার পূর্ব দিকে অবস্থিত জাবালে নূর নামে মশহুর পাহাড় উনার শীর্ষে অবস্থিত। এই পবিত্র গুহা সমতল হতে ৬৩০ মিটরেরও বেশি উচু। যা পবিত্র মসজিদে হারাম হতে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরত্বে।
অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি সুদীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় পবিত্র হুজরা শরীফ উনার যাবতীয় খিদমত সম্পন্ন করে প্রায় ৪ কিলো পাথরের দুর্গম পথ পেরিয়ে পবিত্রতম পা মুবারক-এ হেঁটে হেঁটে জাবালে নূর উনার চূড়ায় অবস্থিত পবিত্র হেরা গুহায় গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য পবিত্রতম খাবার মুবারক পৌঁছে দিয়ে, উনার যাবতীয় খিদমত মুবারক সম্পন্ন করে আবার উনার পবিত্রতম হুজরা শরীফে ফিরে আসতেন।

সম্মানিত ঈমান প্রকাশে অগ্রগণ্য:

উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে ছায়ার মতো লেগে থাকতেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে মুবারক প্রতিটি বিষয় অবহিত করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিকভাবে অহী মুবারক নাযিল হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে অবহিত করেন। আর তিনিও তৎক্ষণাত বিনা বাক্যে মেনে নেন, গ্রহণ করেন। পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَوَّلُ مَنْ اَسْلَمَ وَاٰمَنَ فِىْ خَلْقِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لَـمْ يتقدمها رَجُلٌ وَلَا اِمْرَاَةٌ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ خَدِيْجَةُ عَلَيْهِا السَّلَامُ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি জগতে সর্বপ্রথম সম্মানিত ইসলাম ও ঈমান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার পূর্বে কোনো পুরুষ মহিলা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেনি এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেনি।” সুবহানাল্লাহ!
এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ رَبِيعَةَ السَّعْدِيِّ قَالَ أَتَيْتُ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ وَهُوَ فِي مَسْجِدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ سَابِقَةُ نِسَاءِ الْعَالَمِينَ إِلَى الْإِيمَانِ بِاللَّهِ وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “হযরত রাবী‘আহ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। আমি হযরত হুযায়ফাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার নিকট আসলাম। তখন তিনি মসজিদে নববী শরীফ-এ অবস্থান মুবারক করতেছিলেন। আমি উনাকে বলতে শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যত মহিলা রয়েছেন সকলের অগ্রগামী। অথাৎ তিনি সকলের পূর্বে সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম)
কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়,
لا يخفى أن أهل الأثر وعلماء السير على أن أول الناس إيمانا به على الإطلاق خديجة عليها السلام.
অর্থ: “হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম এবং ঐতিহাসিকগণ উনাদের নিকট একথা সুস্পষ্ট যে, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত ঈমান প্রকাশের ক্ষেত্রে সম্মানিতা প্রথম ব্যক্তিত্বা। (সীরাতে হালাবিয়্যাহ)

http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=1&textid=10716

দুনিয়াবী জিন্দেগী ধোঁকার সামগ্রী ব্যতীত আর কিছুই নয়

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা হূদ শরীফ উনার ১৫-১৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াবী জিন্দেগী চায় এবং তার সৌন্দর্য অর্থাৎ আনন্দ ও আরাম চায়, আমি এই দুনিয়াতেই তার আমলের পরিপূর্ণ বদলা দিবো। তাদেরকে সেখানে কম দেয়া হবে না। আর তাদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই থাকবে না। আর দুনিয়াতে তারা যে আমল করেছে তা নষ্ট হয়ে গেছে। Continue reading “দুনিয়াবী জিন্দেগী ধোঁকার সামগ্রী ব্যতীত আর কিছুই নয়”

পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদু ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনন্তকাল ধরে দায়িমীভাবে পালন করার আরজি এবং তা সাদরে গ্রহণ

একমাত্র খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা দায়িমীভাবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ
অর্থ: “নিশ্চয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং হযরত ফেরেশতাকুল আলাইহিমুস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করেন তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন।” এই পবিত্র আয়াত শরীফে يُصَلُّونَ শব্দটি ফেলে মুদ্বারের ছীগাহ। যা দ্বারা অতীতে শুরু করা, বর্তমানে চলতে থাকা এবং ভবিষ্যতেও হতে থাকবে- এমন অর্থ বুঝায়। তার মানে হচ্ছে- সৃষ্টির শুরু হতে বর্তমানে এবং অনন্তকাল ধরে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পবিত্র সালাম শরীফ পড়তেছিলেন, পড়তে আছেন, অনন্তকাল ধরে পড়তেই থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তো মহান আল্লাহ পাক, এজন্য এ বিষয়টি উনার জন্য সাধারণ বিষয়। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এ জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই উনাদের জন্যও সম্ভব হচ্ছে।
তৃতীয়ত, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও ২৪ ঘণ্টা দায়িমীভাবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন; যা হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ২৪ ঘণ্টা দায়িমীভাবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার যোগ্যতা অর্জনের কারণ হচ্ছে, উনারা সরাসরি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক পেয়েছেন। অর্থাৎ মুবারক তায়াল্লুক, মুবারক নিসবত উনাদের কারণে উনাদের জন্য সহজ ও সম্ভব হয়েছে। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পর থেকে শুরু করে অদ্যবধি কোনো ব্যক্তিত্ব দায়িমীভাবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার চিন্তা করেননি, ফিকির করেননি, আরজিও করেননি। কারণ মুবারক এই বিষয়টি দায়িমীভাবে ২৪ ঘণ্টা পালন করা খুবই কঠিন ও দুরহ।
তারপরও কুল-কায়িনাতে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অনন্তকাল ধরে দায়িমীভাবে ২৪ ঘণ্টা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার জন্য খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক খিদমতে আরজি পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সাদরে মুবারক আরজিখানি গ্রহণ করেন এবং মুবারক ইজাযত ও নির্দেশ মুবারক দেন অনন্তকালব্যাপী দায়িমীভাবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, ঈদে আ’যম ঈদে আকবার পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য। সুবহানাল্লাহ!
আর তাইতো ১৪৩৫ হিজরী সনের ৫৮ দিনব্যাপী মুবারক মাহফিল শেষ হতে না হতেই ১লা রবীউছ ছানী শরীফ হতে ঐতিহ্যবাহী রাজারবাগ দরবার শরীফ-এ শুরু হয়েছে অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন উপলক্ষে মুবারক মাহফিল। সুবহানাল্লাহ! রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার এই অভূতপূর্ব মুবারক তাজদীদ, মুবারক কাজ ও মুবারক আমল ইত্যাদি দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, তিনি হচ্ছেন কুল-কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সর্বশ্রেষ্ঠ ওলীআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!

http://www.al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=1&textid=10331

পবিত্র মীলদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করার ছহীহ ও সুন্নতী তরতীব

পবিত্র মীলদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করার ছহীহ ও সুন্নতী তরতীব

পবিত্র মীলদ শরীফ পাঠ করার তরতীব

ddd

click-here-animated

ঈদ মুবারক !! ঈদ মুবারক !! ঈদ মুবারক ! সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মুবারক হো ! না’রায়ে তাকবীর ! আল্লাহু আকবার ! না’রায়ে রিসালাত ! ইয়া রসূলাল্লাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! সমগ্র সৃষ্টি জগতে সর্বোচ্চ আনন্দের ফোয়ারা নিয়ে তাশরীফ আনলেন পবিত্র ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফ। এ সুমহান ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ। এই সুমহান দিন ঈদ পালন করেন স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন নিজেই। ঈদ পালন করেন সকল ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা। সৃষ্টি জগতের  কল সৃষ্টি আজ আনন্দে আত্মহারা। সৃষ্টি জগত সেজেছে আজ নতুন সাজে, স্বগতম জানাতে পবিত্র এই দিনকে। রহমতের সকল দরজা আজ উন্মুক্ত। নিয়ামতের খাজিনা আজ অবারিত ধারায় প্রবাহমান। সুবহানাল্লাহ্ !! ঈদে বিলাদতে সাইয়্যিদুল আম্বীয়ায়ি ওয়াল মুরসালীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আজ আমরা গুনাহগার উম্মতরাও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে খুশি প্রকাশ করবো।  লাত সালামে মুখোরিত হবো। হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান দীদার প্রার্থী হবো। একটু নেকদৃষ্টি সন্তুষ্টির কামনায় দু হাত পেতে রইবো………। এই পবিত্র  ইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে আপনাদের সকলের খেদমতে এক বিশেষ হাদীয়া পেশ করছি। সেটা হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত পবিত্র মীলাদ শরীফ। সম্পূর্ণ মীলাদ শরীফ এর নিয়ম বাংলায়  চ্চারণ সহ দেয়া হলো। সকলেই আজ অবশ্যই পাঠ করবেন, এবং এর উসীলায় দোয়া করবেন। আজ রাতে সকল দোয়া কবুল হবে, কেউ নিয়ামত প্রাপ্তি থেকে মাহরূম হবে না……! পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করার তরতীব
বা নিয়ম :
ﺍﻋﻮﺫ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺍﻟﺮﺟﻴﻢ
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
ﻟﻘﺪ ﺟﺎﺀﻛﻢ ﺭﺳﻮﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﻔﺴﻜﻢ ﻋﺰﻳﺰ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺎ ﻋﻨﺘﻢ
ﺣﺮﻳﺺ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺑﺎﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺭﺀﻭﻑ ﺭﺣﻴﻢ . ﻓﺎﻥ ﺗﻮﻟﻮﺍ
ﻓﻘﻞ ﺣﺴﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﻫﻮ © ﻋﻠﻴﻪ ﺗﻮﻛﻠﺖ © ﻭﻫﻮ
ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ.
ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﺑﺎ ﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﺭﺟﺎﻟﻜﻢ ﻭﻟﻜﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ
ﺧﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻴﻴﻦ © ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻜﻞ ﺷﻲﺀ ﻋﻠﻴﻤﺎ.
ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻣﺎﻝﺀﻛﺘﻪ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺒﻲ © ﻳﺎ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ
ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺻﻠﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻤﻮﺍ ﺗﺴﻠﻴﻤﺎ .
বাংলা উচ্চারণ: আউযু বিল্লাহিমিনাশ শায়তানির রযীম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম। লাকাদ জা’আকুম রসূলুম মিন আনফুসিকুম আযীযুন আলাইহি মা আনিত্তুম হারীছুন আলাইকুম বিল  ‘মিনিনা রউফুর রহীম। ফাইন তাওয়াল্লাও ফাক্বুলহাসবি আল্লাহু লা’ ইলাহা ইল্লাহু। আলাইহি তাওয়াককালতু , ওহুয়া রব্বুল আরশীল আযীম। ( সূরা তাওবা, আয়াত শরীফ ১২৮,১২৯) মা কানা  হম্মাদুন আবা আহাদীম মির রীজালিকুম ওলাকির রসূল্লাল্লাহি ওয়া খতামান নাব্যিয়িন। ওয়া কা’নাল্লাহু বিকুল্লি শাইয়্যিন আলীমা। ( সূরা আহযাব ৪০) ইন্নাল্লাহা ওয়া মালা’ইকাতাহু ইয়ুছল্লুনা আলান নাব্যি। ইয়া’
আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানু ছল্লু
আলাইহি ওয়া সাল্লীমু তাসলীমা।
( সূরা আহযাব ৫৬)
( এরপর মুহব্বতের সাথে নিম্নোক্ত দরূদ
শরীফ পাঠ করুন এবং দরূদ শরীফের
সাথে মিলিয়ে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করুন)
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺻﻞ ﻋﻠﻲ ﺳﻴﺪﻧﺎ ﻣﻮﻟﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﻭﻋﻠﻲ ﺍﻝ ﺳﻴﺪﻧﺎ ﻣﻮﻟﻨﺎ ﺣﺒﻴﺐ ﺍﻟﻠﻪ
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ছল্লীআলা’
সাইয়্যিদিনা মাওলানা রসূলিল্লাহ।
ওয়াআ’লা আলি সাইয়্যিদিনা মাওলানা হাবিবিল্লাহ।
ক্বুল কা’য়িনাত সবাই বলেন,
আজকে মোদের ঈদের দিন।
এ ধরাতে তাশরীফ আনলেন রহমাতুল্লিল
আলামীন।
আল্লাহুম্মা ছল্লীআলা’
সাইয়্যিদিনা মাওলানা রসূলিল্লাহ।
ওয়াআ’লা আলি সাইয়্যিদিনা মাওলানা হাবিবিল্লাহ।
আসমানেতে ফেরেশতারা কাতারে কাতারে খাঁড়া,
পড়ছেন উনার ছল্লু
আলা ইয়া হাবীবাল্লাহ।
আল্লাহুম্মা ছল্লীআলা’
সাইয়্যিদিনা মাওলানা রসূলিল্লাহ।
ওয়াআ’লা আলি সাইয়্যিদিনা মাওলানা হাবিবিল্লাহ।
এমন নবীজি উনার উম্মত আমরা,
যে নবীজী উনার নাই কোন তুলনা।
উনার প্রতি ছলাত পড়েন স্বয়ং আল্লাহ
রব্বুনা।
আল্লাহুম্মা ছল্লীআলা’
সাইয়্যিদিনা মাওলানা রসূলিল্লাহ।
ওয়াআ’লা আলি সাইয়্যিদিনা মাওলানা হাবিবিল্লাহ।
অতঃপর যিনি মীলাদ শরীফ পাঠ করবেন
তিনি নিম্নোক্ত “তাওয়াল্লুদ শরীফ”
পাঠ করবেন-
ﻧﺤﻤﺪ ﻭ ﻧﺼﻠﻲ ﻭ ﻧﺴﻠﻢ ﻋﻠﻲ ﺭﺳﻮﻟﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭ ﺍﻟﻪ
ﻭﺍﺻﺤﺎﺑﻪ ﺍﺟﻤﻌﻴﻦ
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
ﻭﻟﻤﺎ ﺗﻢ ﻣﻦ ﺣﻤﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺳﺘﺔ ﺍﺷﻬﺮ
ﻋﻠﻲ ﻣﺸﻬﻮﺭ ﺍﻻﻗﻮﺍﻝ ﺍﻟﻤﺮﻭﻳﺔ، ﺗﻮﻓﻲ ﺑﻠﻤﺪﻳﻨﺔ ﺍﻟﻤﻨﻮﺭﺓ
ﺍﻟﺸﺮﻳﻔﺔ ﺣﻀﺮﺓ ﺫﺑﻴﺢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﻜﺮﻡ ﺍﺑﻮﻩ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ، ﻭﻛﺎﻥ ﻗﺪ ﺍﺟﺘﺎﺯ ﺑﺎﺧﻮﺍﻟﻪ ﺑﻨﻲ ﻋﺪﻱ ﻣﻦ ﺍﻟﻄﺎﺀﻓﺔ
ﺍﻟﻨﺠﺎﺭﻳﺔ، ﻭﻣﻜﺚ ﻓﻴﻬﻢ ﺷﻬﺮﺍ ﺳﻘﻴﻤﺎ ﻳﻌﺎﻧﻮﻥ ﺳﻘﻤﻪ ﻭ
ﺷﻜﻮﺍﻩ ، ﻭﻟﻤﺎ ﺗﻢ ﻣﻦ ﺣﻤﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ
ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺮﺍﺟﺢ ﺗﺴﻌﺔ ﺍﺷﻬﺮ ﻗﻤﺮﻳﺔ ، ﻭﺍﻥ ﻟﻠﺰﻣﺎﻥ ﺍﻥ
ﻳﻨﺠﻠﻲ ﻋﻨﻪ ﺻﺪﺍﻩ ، ﺣﻀﺮﺕ
ﺳﻴﺪﺓ ﻧﺴﺎﺀ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﺍﻣﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻟﻴﻠﺔ
ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺣﻀﺮﺓ ﺍﻡ ﺍﻟﺒﺸﺮ ﻋﻠﻴﺤﻬﺎ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭ ﺣﻀﺮﺓ ﺍﻡ
ﺫﺑﻴﺢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻻﻭﻟﻲ ﻭ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻋﻠﻴﻬﻤﺎ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭ ﺣﻀﺮﺓ
ﺭﺑﺔ ﻛﻠﻴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭ ﺣﻀﺮﺓ ﺍﻡ ﺭﻭﺡ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻓﻲ ﻧﺴﻮﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺤﻈﻴﺮﺓ ﺍﻟﻘﺪﺳﻴﺔ ،
ﻭﺍﺧﺬﻫﺎ ﺍﻟﻤﺨﺎﺽ ، ﻓﻮﻟﺪﺗﻪ ﺳﻴﺪ ﺍﻟﻤﺮﺳﻠﻴﻦ ﺍﻣﺎﻡ
ﺍﻟﻤﺮﺳﻠﻴﻦ ﺧﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻴﻦ ﻭ ﺍﻟﻨﻮﺭ ﺍﻟﻤﺠﺴﻢ ﺣﺒﻴﺐ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻧﻮﺭﺍ ﻳﺘﻼ ﻻﺳﻨﺎﻩ
বাংলা উচ্চারন : নাহমাদুহূ
ওয়া নুছল্লী ওয়া নাসাল্লিমু
আলা রসূলিহিল কারীম
ওয়া আলা আলিহী ওয়া আছহাবিহী আজমাঈন।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
ওয়া লাম্মা তাম্মা মিন
হামলিহী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা সিত্তাতু
আশহূরিন আলা মাশহুরিল আক্বওয়ালিল
মারবিয়্যাহ। তুউফফিয়া বিল মাদীনাতিল
মুনাওওয়ারাতিশ শরীফাতি হাদ্বারাত
যাবিহুল্লাহিল মুকাররম আবুহু ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
ওয়া কানা কাদিজতাযা বি আখওয়ালিহী বানী আদিয়্যিম
মিনাত ত্বয়িফাতিন নাজ্জারিয়্যাহ।
ওয়া মাকাছা ফীহিম শাহরাং সাক্বীমাইঁ
ইউয়ানূনা সুক্বমাহূ ওয়া শাকওয়াহ।
ওয়া লাম্মা তাম্মা মিন
হামলিহী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলার
রাজিহি তিসয়াতু
আশহূরিং ক্বামারিয়্যাহ। ওয়া আনা লিয
যামানি আইঁ ইয়াংজালিয়া আনহু ছদাহ।
হাদ্বারাত সাইয়্যিদাতা নিসায়িল
আলামীনা উম্মাহূ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা লাইলাতা মাওলিদিহী হাদ্বারাত
উম্মুল বাশারি আলাইহাস সালাম
ওয়া হাদ্বারাত উম্মু যাবীহিল্লাহিল
উলা ওয়াছ ছানিয়াতু আলাইহাস সালাম
ওয়া হাদ্বারাত রব্বাতু
কালীমিল্লাহি আলাইহাস সালাম
ওয়া হাদ্বরাত উম্মু রূহিল্লাহি আলাইহাস
সালাম ফী নিসওয়াতিম মিনাল মিনাল
হাযীরাতিল কুদসিয়্যাহ। ওয়া আখাযাহাল
মাখাদ্ব ফাওয়ালাদাতহু সাইয়্যিদাল
মুরসালীন ইমামাল মুরসালীন খাতামান
নাবিয়্যিন ওয়ান নূরাল মুজাসসাম
হাবীবাল্লহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরাইঁ
ইয়াতালা’লা উসিনাহ।
(তারপর সকলেই ক্বিয়াম শরীফ করবেন
বা দাঁড়িয়ে মুহব্বতের সাথে নিম্নোক্ত
ভাবে সালাম পেশ করবেন এবং প্রতিবার
সালমের
সাথে একটি করে ক্বাছীদা শরীফ
পড়বেন )
ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ + ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ
ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻲ ﺣﺒﻴﺐ ﺍﻟﻠﻪ + ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ
ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ + ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻳﺎ ﻧﺒﻲ
ﺍﻟﻠﻪ
ﺍﻟﺴﻼﺍﻡ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻳﺎ ﺣﺒﻴﺐ ﺍﻟﻠﻪ + ﺻﻠﻮﺕ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻜﻢ
বাংলা উচ্চারণ :
ছল্লাল্লাহু আলা রসূলিল্লাহ +
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
ছল্লাল্লাহু আলা হাবীবিল্লাহ +
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ +
আসসালামু আলাইকুম
ইয়া নাবিইয়্যাল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম ইয়া হাবীবাল্লাহ+
ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইকুম।
ইয়া নবী সালাম বেশুমার !
আমরা যে উম্মত গুনাহগার।
কে আছে মোদের ত্বরাবার, সুপারিশ
বিনে আপনার।
আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ +
আসসালামু আলাইকুম
ইয়া নাবিইয়্যাল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম ইয়া হাবীবাল্লাহ+
ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইকুম।
মওতের কঠিন সময়ে, পাই যেন আপনায়
দেখিবারে।
মোদের লাশ কবরে রাখিলে, ঠাঁই দিয়েন
পাক ক্বদমেতে।
আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ +
আসসালামু আলাইকুম
ইয়া নাবিইয়্যাল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম ইয়া হাবীবাল্লাহ+
ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইকুম।
ইয়া রসূলাল্লাহ ! ইয়া হাবীবাল্লাহ !
ছলাত ও সালাম নিন যামানার মুজাদ্দিদ
উনার।
দরূদ ও সালাম নিন হযরত আহলে বাইত
শরীফ উনাদের।
না’ত ও সালাম নিন এই উম্মাহর।
উম্মত যে আমরা আপনার !
আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ +
আসসালামু আলাইকুম
ইয়া নাবিইয়্যাল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম ইয়া হাবীবাল্লাহ+
ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইকুম।
( সালাম শরীফ শেষে এরপর সবাই
বসে পাঠ করবেন )
ইয়া রব্বি ছল্লি ওয়া সাল্লিম দায়িমান
আবাদান আবাদা॥
খায়রি খালক্বি কুল্লিহিম, ভেজ আয় রব
মেরে দরূদ আওর সালাম বর গুযীদা নবী পর
আপনি মুদাম।
বালাগাল উলা বিকামালিহি +
কাশাফাদদুজা বিজামালিহি।
হাসুনাত জামিইউ খিছলীহি + ছল্লু
আলাইহি ওয়া আলিহি।
সাল্লিমু ইয়া ক্বাওমুবাল ছল্লু
আ’লা ছদরীল আমীন।
মুছত্বফা মা জা’য়িল্লা রহমাতাল্লিল
আ’লামীন।
আত্বিরিল্লাহুম্মা ক্বাবরাহুল কারীম +
বিআরফী শাযয্যিয়্যাম ছলাতিউ
ওয়া তাসলীম।
আল্লাহুমা ছল্লি ওয়া সাল্লীম
ওয়া বারিক আলাইহি।
( অতঃপর ছওয়াব
রেসানী করে দোয়া মুনাজাত
করতে হবে )
ছওয়াব রেসানী করার নিয়ম-
১) ইস্তিগফার শরীফ তিনবার
( আসতাগফিরুল্লাহা রব্বি মিন
কুল্লি জাম্বিউঁ ওয়াতুবু ইলাইহি ……)
২) আউযুবিল্লাহ শরীফ ও বিসমিল্লাহ
শরীফ সহ সূরা ফাতিহা শরীফ একবার।
৩) বিসমিল্লাহ শরীফ সহ সূরা ইখলাছ
( কুল হুয়াল্লাহ শরীফ) তিনবার।
৪) দরূদ শরীফ পাঁচ বার
দরূদ শরীফ –
আল্লাহুম্মা ছল্লী আলা সাইয়্যিদিনা নাবিয়্যিনা হাবীবিনা শাফিয়্যিনা মাওলানা ওয়াসিলাতি ইলাইকা ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লিম।

অতপর হাত উঠিয়ে অত্যন্ত মুহব্বতের
সাথে দৃঢ় চিত্তে হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
উসীলা দিয়ে দোয়া করতে হবে।
এবং দোয়ার শুরুতে,
মাঝে এবং শেষে অবশ্যই দরূদ শরীফ পাঠ
করতে হবে।
আজকে যেহেতু খাছ নিয়ামত বন্টনের
রাত তাই আমরা দোয়া করবো,
ইয়া আল্লাহ পাক ! পবিত্র সাইয়্যিদুল
আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে,
আমাদের পূর্ববর্তী সকল গুনাহ
খতা ক্ষমা করুন এবং ইন্তেকালের আগ
পর্যন্ত সকল গুনাহ থেকে হিফাজত করুন।
আপনার হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত
এবং আহলে বাইত শরীফ উনাদের মুহব্বত
আমাদের অন্তর পরিপূর্ণ করে দিন।
সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করার তৌফিক দান
করুন। সমগ্র দুনিয়াতে সকল
স্থানে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন
করার তৌফিক দান করুন। খাছ
করে সবাইকে যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ
উনাকে চিনার তৌফিক দান করুন।
আমাদের অন্তরের সকল নেক দোয়া নেক
আরজী কবুল করে নিন !!
আমীন ! আমীন ! আমীন !
পরিশেষে এই বিশেষ একটি ক্বওল শরীফই
সকল মুসলমানের জন্য যথেষ্ট, হযরত
আলি কাররামাল্লাহু ওয়জহাহু আলাইহিস
সালাম বলেন-
ﻣَﻦْ ﻋَﻈَّﻢَ ﻣَﻮْ ﻟِﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰ ﺻَﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَ ﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻛَﺎﻥَ
ﺳَﺒَﺒَﺎ ﻟِﻘﺮﺍ ﺗﻪ ﻻ ﻳَﺨﺮﺝ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﺍِﻻ َّﺑِﺎﻻِ ﻳْﻤَﺎﻥِ ﻭَﻳَﺪْﺧُﻞُ
ﺍﻟﺠَﻨَّﻪَ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣِﺴَﺎﺏ
অর্থাৎ-
“যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে সম্মান
করবে হবে সে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ
করবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ
করবে”।
দলীল-
√আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম,
পৃষ্ঠা নং-৮
না’রায়ে তাকবীর ! আল্লাহু আকবার !
না’রায়ে রিসালাত ! ইয়া রসূল্লাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !!
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মুবারক হো !
ঈদে আযম মুবারক হো !
ঈদে আকবার মুবারক হো !

আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি সুসংবাদ

আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি সুসংবাদ

আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি সুসংবাদ

11053318_150078388658474_6479203407576069605_n
১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সুসংবাদ দিয়ে বলেন, “আপনি ইলমে কালাম উনার মুজতাহিদ।” সুবহানাল্লাহ!


২। আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন মুরাকাবার হালতে ছিলেন। সেই সময় উনার উপর ইলহাম হলো: “গাফারতুলাকা ওয়া লিমান তাওয়াসসালা বিকা বিওয়াসিতাতীন আও বি-গাইরে ওয়াসিতাতীন ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ।”
অর্থ: “আপনাকে ক্ষমা করা হলো এবং আপনাকে যারা উসীলা হিসেবে গ্রহণ করবে সরাসরি অথবা মধ্যস্থতার মাধ্যমে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হলো।” সুবহানাল্লাহ!
৩। আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- “ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত পুরুষ ও নারী আমার সিলসিলা কিংবা অন্য কোনো সিলসিলার মাধ্যমে আমার সম্মানিত তরীক্বা উনার মধ্যে দাখিল হবে তাদের সকলকেই আমার সম্মুখে পেশ করে তাদের নাম, নসব, বংশ পরিচয়, জš§ভূমি এবং বাসস্থান সমস্ত কিছুই বলে দেয়া হয়েছে। আমি ইচ্ছা করলে সকলেরই নাম, ঠিকানা বলে দিতে পারি।” সুবহানাল্লাহ!
৪। আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এ বিষয়েও সুসংবাদ দেয়া হয়েছিলো যে, তিনি যার জানাযার নামায পড়বেন, তার সমস্ত গুনাহখাতা মাফ করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ!
৫। সীমাহীন বিনয়-নম্রতার জন্য আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একবার খেয়াল হলো যে, তিনি যা লিখতেন তা মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দি এবং কবুলিয়াত হাছিল করছে কিনা- এটা মকবুল হয় কিনা, তা উনার নিকট প্রতীয়মান হচ্ছে না। তৎক্ষণাৎ ইলহাম হলো- “আপনি যা কিছু লিখছেন, সেটা পুরোপুরি মকবুল।” আবার ইলহাম হলো- “যেটা লিখছেন কেবল সেটাই মকবুল নয়, বরং পরবর্তীতে যা কিছু আলোচনা ও কথপোকথনের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন সেটাও মকবুল এবং তা আমারই বার্তা ও বর্ণনা।” সুবহানাল্লাহ!
৬। আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজের মেহেরবানীতে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমার সবকিছু লিখিত বস্তু ও মকতুবাত শরীফ আখিরী যামানায় হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সম্মুখে পেশ করা হবে। তা উনার নিকট মকবুল বা গ্রহণযোগ্য হবে।” সুবহানাল্লাহ! (হালাতে মাশায়িখে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দিদীয়া-২/৩৭)
৭। মহান আল্লাহ পাক তিনি আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এক নতুন তরীক্বা দান করেছিলেন। উনার পূর্ববর্তী হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনার মা’রিফতী সায়ির বা ভ্রমণ কেবলমাত্র বিলায়েতে ছুগরা বা ক্বলব লতীফা উনার উপর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। কদাচিৎ দুই একজনের বিলায়েতে কুবরা পর্যন্ত সায়ির (ছফর বা ভ্রমণ) নছীব হতো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজের ফযল ও করম দ্বারা আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে আ’যীম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বিলায়েতে কুবরা, বেলায়েতে মালায়েআলা, কামালতে নুবুওওয়াত ও কামালতে রিসালত, কামালতে উলুল আ’যম, হাক্বীক্বতে ইবরাহীমী, হাক্বীক্বতে মুসাবী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী, হাক্বীক্বতে আহমদী, হূব্বে সরফা, ও লা-তাই’উন, হাক্বীক্বতে কা’বা, হাক্বীক্বতে কুরআন, হাক্বীক্বতে সালাত, মা’বুদীয়তে ছরফা মাক্বামসমূহের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে আ’যীম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাহেবযাদা হযরত খাজা মুহম্মদ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত খাজা মুহম্মদ মা’সুম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে উপরোক্ত তামাম মাক্বাম, সায়ির করিয়েছিলেন। আর উনাদের মাধ্যমে উনাদের সাহেবযাদাগণ ও খলীফাগণ উনারা উক্ত মাক্বামসমূহ সায়ির করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে এই সম্মানিত তরীক্বা উনার মধ্যে উক্ত মাক্বামসমূহের সায়ির বিদ্যমান রয়েছে। ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত উহা জারি থাকবে। এটাকেই তরীক্বায়ে নকশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদীয়া বলা হয়।
৮। আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি এই সুমহান তরীক্বা উনার নিসবত হাছিল করবেন এবং এই সুমহান তরীক্বা উনার নিসবত উনার উপর সর্বাঙ্গীন সুন্দররূপে বিকশিত হবে।” সুবহানাল্লাহ!
৯। আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে আ’যীম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, “সম্মানিত নুবুওওয়াত ব্যতীত মানুষের পক্ষে যত কামালত হাছিল করা সম্ভব, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তা দান করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (হালাতে মাশায়িখে নক্শবন্দীয়া মুজাদ্দিদীয়া-২/৩৮)
এ কথা অনস্বীকার্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে যে নজীরবিহীন খুছুছিয়াত বৈশিষ্ট্য মুবারক দান করেছিলেন, তার সুনিপুণ বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়।

‘সাইয়্যিদাতুল উমাম’ লক্বব মুবারক উনার শান বা মহিমা

‘সাইয়্যিদাতুল উমাম’ লক্বব মুবারক উনার শান বা মহিমা

سيدة الامم “সাইয়্যিদুল উমাম” দু’খানি আরবী শব্দের সমন্বয়ে এই সম্মানিত লকব মুবারকখানি প্রদত্ত হয়েছে। পৃথকভাবে শব্দ মুবারক দু’খানি হচ্ছে سيده “সাইয়্যিদাহ” এবং الامم “আল উমাম”।

سيد (সাইয়্যিদুন) শব্দ মুবারকখানি একবচন এবং পুরুষবাচক শব্দ। এর বহুবচন হচ্ছে سادة “সা-দাতুন” ও اسياد “আসইয়াদুন”। এর স্ত্রীবাচক শব্দ মুবারকখানি হচ্ছে سيدة “সাইয়্যিদাতুন” এবং এর বহুবচন হচ্ছে سيدات “সাইয়্যিদা-তুন”। অর্থ মুবারক হচ্ছে সাইয়্যিদ, ইমাম, শ্রেষ্ঠ, সম্মানিত, পথপ্রদর্শক, নেতৃস্থানীয়, মুনীব, অভিভাবক ইত্যাদি।
الامم শব্দখানির মধ্যে ال আলিফ ও লাম অক্ষরদ্বয় সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া শব্দের শুরুতে একত্রে আলিফ ও লাম অক্ষরের ব্যবহারে শব্দটি ইসিম বা বিশেষ্য পদ এবং নির্দিষ্ট পদ হিসেবে পরিচয় বহন করে। মূল শব্দ মুবারকখানি হচ্ছে امم উমামুন”। এ শব্দ মুবারকখানি امة “উম্মাতুন” শব্দ মুবারকের বহুবচন। অর্থ হচ্ছে উম্মতগণ।
অতএব, একত্রে বা একসাথে سيدة الامم “সাইয়্যিদাতুল উমাম” শব্দ মুবারক দু’খানির অর্থ মুবারক হচ্ছে, উম্মতগণের ইমাম বা পথপ্রদর্শক। সুবহানাল্লাহ!
প্রকাশ থাকে যে, সাইয়্যিদুল খল্ক্ব, সাইয়্যিদুন নাস, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরুম মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার বিনতুর র-বিয়াহ (চতুর্থ মেয়ে) হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি হাযিহিল উম্মাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, হচ্ছেন হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আর উনারই লখতে জিগার ইবনুল আউওয়াল (প্রথম ছেলে) হচ্ছেন সাইয়্যিদুর রিজাল, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপভাবে নূরুম মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ ক্বায়িম-মাক্বাম হচ্ছেন সাইয়্যিদু আওলাদি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুন নাস, সাইয়্যিদুল আউলিয়া ওয়াল মুজাদ্দিদীন, সুলত্বানুন নাছীর, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! এবং উনার লখতে জিগার বিনতুছ ছানিয়াহ (দ্বিতীয় মেয়ে) হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুন নিসা ক্বায়িম-মাক্বামে বিনতু রসূলিল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদাতুনা হযরত নিবরাসাতুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি। আর উনারই লখতে জিগার ইবনুল অউওয়াল (প্রথম ছেলে) হচ্ছেন ক্বায়িম-মাক্বামে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, নূরুম মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে ইরশাদ মুবারক করেন-
ان ابنى هذا سيد ولعل الله ان يصلح به بين فئتين عظيمتين من الـمسلمين
অর্থ: “আমার এই সন্তান (পৌত্র) তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদ। অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দ্বারা মুসলমানদের বিবাদমান বিরাট দুটি দলের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দিবেন।” (বুখারী শরীফ)

পবিত্র শবে বরাত উনার আমলের তরতীব সমূহ

পবিত্র শবে বরাত উনার আমলের তরতীব সমূহ

পবিত্র বরাত শরীফ উনার রাতে জাগ্রত থেকে বিভিন্ন প্রকারের পবিত্রতম ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে উৎসাহ ও নির্দেশনা মুবারক দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “এই পবিত্রতম বরাত উনার রাতের দু’রাকায়াত নামায বনী ইসরাঈলের জনৈক বুযূর্গ ব্যক্তির চারশ বৎসরের ইবাদতের চেয়েও অধিক ফযীলতপূর্ণ এবং এ রাতের ইবাদত-বন্দেগী বিশটি মক্ববুল হজ্জ উনার ছওয়াব, বিশ বছর পবিত্র রোযা উনার ছওয়াব সমতুল্য।”
তবে এ রাতে কত রাকায়াত পবিত্র নামায পড়তে হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও মূল মূল ও খাছ খাছ পবিত্র ইবাদত উনার মাধ্যমে এ রাত জাগরণ করলে সমস্ত ইবাদতেরই ছওয়াব পাওয়া যায়। তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
প্রথমতঃ ছলাতুল ইশা উনার নামায:
প্রথমে জামায়াতের সাথে পবিত্র ইশা নামায পড়ে নিতে হবে। অতঃপর পবিত্র সুন্নত নামায পড়ার পর পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পাঠ। যেহেতু পবিত্র মীলাদ শরীফ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পাঠ করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! যা নাজাত ও শাফায়াত লাভের সর্বোত্তম উত্তম মাধ্যম। কাজেই পবিত্র মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উনার গুরুত্ব সর্বাধিক। অতঃপর দোয়া করতে হবে।
অতঃপর পবিত্র শবে বরাত উনার নামায:
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে কত রাকায়াত নামায পড়তে হবে এ ব্যাপারে যদিও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তবে পবিত্র শবে বরাত উনার ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে।
অতঃপর ছলাতুছ তাসবীহ নামায পড়বেন:
এ মহান রাতে পবিত্র ছলাতুছ তাসবীহ নামায পড়বেন, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা হয়।

অতঃপর পবিত্র যিকির-আযকার করবেন যার দ্বারা দিল ইছলাহ ও ইতমিনান হয়।
অতঃপর পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবেন:
এ পবিত্র রাতে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবেন, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদত করার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে আফযল।
অতঃপর সম্ভব হলে কবর যিয়ারত করবেন:
এর দ্বারা পবিত্র সুন্নত আদায় হয়। কেননা পবিত্র বরাত উনার রাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই জান্নাতুল বাক্বীতে গিয়ে যিয়ারত মুবারক করেছেন ও পবিত্র দোয়া করেছেন। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারা রাত্র ব্যয় করে দেয়া ঠিক হবে না। সম্ভব হলে পবিত্র সুন্নত উনাকে আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোনো কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবেন।
অতঃপর পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায:
পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায পড়বেন, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহান নৈকট্য হাছিল হয়। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ:
পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত উনাদের জন্য সবচেয়ে বড় ইবাদত ও নাজাতের মূল কারণ। সুবহানাল্লাহ! যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়।
অতঃপর দোয়া-ইস্তিগফার করবেন:
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু’হাত তুলে মনের চাহিদানুযায়ী দোয়া করবেন, যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হবেন ও উনার মহান নিয়ামত লাভে ধন্য হবেন। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবেন, যার মাধ্যমে বান্দার সমস্ত গুনাহখতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত উনার বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।
দান-ছদকা ও গরিব-মিসকীনদের খাদ্য খাওয়ানো:
গরিব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবেন ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবেন, যার দ্বারা মহান ‘হাবীবুল্লাহ’ লক্বব মুবারকে ধন্য হওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে যদি কেউ গরিব-মিসকীন বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে খাওয়াতে চায়, তবে এ ক্ষেত্রে হালুয়া-রুটি কিংবা গোশত-রুটি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলে তা হবে পবিত্র খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এ পবিত্র সুন্নত পালনের খেয়ালে যদি কেউ তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে গরিব-মিসকীন ও ওইসব লোকদের জন্য যারা সারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে পবিত্র রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও পবিত্র রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি, গোশত-রুটি, গোশত-পোলাও, কোর্মা-পোলাও, মোরগ-পোলাও, তেহারী, গোশত-খিচুরী ইত্যাদি আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোনো প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই খাছ সুন্নত আদায়ের সাথে সাথেই অশেষ বারাকাত, ফুয়ুযাত, নিয়ামত, ফযীলত ও নাজাতের কারণ হবে।
উল্লেখ্য যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, তারা ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলত, মুনাজাত যে কোনো সময়েই করা যায়। তবে পবিত্র বরাত উনার রাত্রে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্তই। এরপর পবিত্র বরাত উনার রাত্র অবশিষ্ট থাকে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, “ফজর বা ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদের বিভিন্ন দোয়া কবুল করেন।”
অতএব, সকলের উচিত মূল মুনাজাত বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা। অতঃপর ছুবহে ছাদিকের পূর্বে পরের দিনের পবিত্র রোযার জন্য সাহরী খেয়ে নিবে। কারণ এই পবিত্র রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্য এত অধিক যে, জিন-ইনসান তো বটেই এমনকি পশু-পাখি, গর্তের পিপীলিকা, সমুদ্রের অন্যান্য প্রাণীসহ মাছেরাও এ পবিত্র শবে বরাত উনার রোযা রেখে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই আমাদের সকলেরই উচিত এ পবিত্র বরাত উনার রাত্রি মুবারক যথাযথভাবে পালন করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা। (আমীন)

ছবিবিহীন পবিত্র হজ্জ পালন নিশ্চিত করা সমস্ত মুসলিম দেশের সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে প্রত্যেক স্বাধীন, বালিগ, সুস্থ, দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন মুসলমানের যদি সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর পবিত্র হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় থাকে, যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকে, জান-মাল ও পবিত্র ঈমান-আমলের নিরাপত্তা থাকে, তাহলে তার জন্য জীবনে একবার পবিত্র হজ্জ করা ফরয। যাদের পবিত্র হজ্জে উনার যাওয়ার পথে প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে, মাল ছিনতাইয়ের ভয় রয়েছে, পবিত্র ঈমান ও আমল নষ্ট হওয়ার অর্থাৎ কোনো কুফরী ও হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের উপর পবিত্র হজ্জ ফরয হয় না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যাদের পথের নিরাপত্তা ও আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য পবিত্র হজ্জ ফরয।”

পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার পরও যদি কেউ গাফলতি করে পবিত্র হজ্জ না করে তবে সে ঈমানহারা হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ-এ পথের নিরাপত্তা বলতে মাল-জান এবং পবিত্র ঈমান উনার নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। কারণ মাল-জানের চেয়ে পবিত্র ঈমান উনার গুরুত্ব অনেক বেশি। কাজেই পবিত্র ঈমান ও আমল নষ্ট হওয়ার অর্থাৎ কোনো কুফরী ও হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এটা জানা সত্ত্বেও কেউ যদি পবিত্র হজ্জে রওয়ানা করে এবং তাদের দ্বারা কুফরী ও হারাম কাজ সংঘটিত হয়, তাহলে এজন্য তাদের কুফরী ও কবীরা গুনাহ হবে। অনুরূপ মহিলাদের সাথে স্বামী কিংবা কোনো সচ্চরিত্রবান মাহরাম পুরুষ সঙ্গে না নিয়ে তারা যদি পবিত্র হজ্জে রওয়ানা করে এবং পথে কোনো অশালীন কাজ সংঘটিত হয় সেজন্য তারাই কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে।
কাজেই ছবি ও পর্দার আদেশ লঙ্ঘন করে পবিত্র হজ্জ পালন করলে সে পবিত্র হজ্জ কস্মিনকালেও আদায় হবে না এবং এটাই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার ফতওয়া। তাই বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম দেশের সরকারের উচিত ছবিবিহীন পবিত্র হজ্জ পালন নিশ্চিত করার জন্য একসাথে কাজ করা।