Category: ইলমে তাসাউফ

ইখ্লাছ ব্যতীত আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ পাক উনার নিকট নেই।

ইখ্লাছ ব্যতীত আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ পাক উনার নিকট নেই।

ইখ্লাছ ব্যতীত আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ পাক উনার নিকট নেই। তাই বলা হয়ে থাকে যে, ইলম বা ইসলাম হলো একটি পাখি, আমল হলো তার পাখা, আর ইখ্লাছ হলো তার রূহ্। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
فالناس كلهم هلكى الا العالمون والعالمون كلهم هلكى الا العاملون والعاملون كلهم هلكى الا المخلصون والمخلصون على خطر عظيم. অর্থ:- “সকল মানুষ ধ্বংস প্রাপ্ত, একমাত্র আলেমগণ ব্যতীত। আলেমগণও ধ্বংস প্রাপ্ত, একমাত্র আমলকারীগণ ব্যতীত। আমলকারীগণও ধ্বংস প্রাপ্ত, একমাত্র
ইখ্লাছের সাথে আমলকারীগণ ব্যতীত। আর মুখ্িলছ বান্দাগণও মহা চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।”

কিতাবের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ঈমানদারদের জন্যে ইখ্লাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার কারণে মহান আল্লাহ পাক, রাব্বুল আ’লামীন কুরআনশরীফ-উনার অসংখ্য স্থানে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদীছ শরীফে ইখ্লাছ অর্জনের ব্যাপারে তাকীদ করেছেন। যেমন আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
وما امروا الا ليعدوا الله مخلصين له الدين.
অর্থ:- “আমি তাদেরকে শুধুমাত্র ইখ্লাছের সাথে ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছি।” (সূরা আল বাইয়্যিনাহ্/৫)

আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, يامعاذ اخلص دينك يكفيك العمل القليل.
অর্থ:- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে মু’য়াজ, তোমার দ্বীন বা আমলের মধ্যে ইখ্লাছ পয়দা কর, তবে তোমার জন্যে অল্প আমলই যথেষ্ট।” (তারগীব)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইখ্লাছ ছাড়া আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ পাক উনার নিকট নেই। আর ইখ্লাছের সাথে অল্প আমলই আল্লাহ পাক উনার রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। অপরদিকে ইখ্লাছ বিহীন পাহাড় পরিমাণ আমলের দ্বারাও আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী রেজামন্দী হাছিল করা সম্ভব নয়।

ইখ্লাছের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان اول الناس يقض عليه يوم القيامة رجل استشهد فاتى به فعرفه نعمته فعرفها فقال فماعملت فيها؟ قال قاتلت فيك حتى استشهدت، قال كذبت- ولكنك قاتلت لان يقال جرىء فقد قيل ثم امربه فسحب على وجهه حتى القىفى النار- ورجل تعلم العلم وعلمه وقرأ القران فاتىبه فعرفه نعمه- فعرفها قال فما عملت فيها؟ قال تعلمت العلم وعلمته وقرأت فيك القران- قال كذبت ولكنك تعلمت العلم ليقال انك عالم-
وقرأت القران ليقال انك قارىء- فقد قيل- ثم امربه فسحب على وجهه حتى القى فى النار- ورجل وسح الله عليه- واعطاه من اصناف المال كله- فاتى به فعرفه نعمه فعر فها- قال فما عملت فيها؟ قال ماتر كت من سببل تحب ان ينفق فيها الاانفقت فيها لك- قال كذبت ولكنك فعلت ليقال هوجواد فقد فيل ثم امربه فسحب على وجهه ثم القى فى النار. (رواه مسلم)
অর্থ:- “ক্বিয়ামতের দিন তিনজন লোককে প্রথমে বিচারের জন্য আনা হবে। প্রথম যে ব্যক্তিকে আনা হবে, সে হলো একজন শহীদ। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, হে ব্যক্তি তোমাকে আমি এত শক্তি-সামর্থ্য দিলাম, তা দিয়ে তুমি কি করেছ? সে বলবে, আল্লাহ পাক আমি জ্বিহাদ করতে করতে আপনার জন্য শহীদ হয়েছি। আল্লাহ পাক বলবেন, মিথ্যা কথা, তুমি আমার জন্য জ্বিহাদ করনি। মানুষ তোমাকে বড় পালোয়ান বা শক্তিশালী বলবে, সেজন্য তুমি জ্বিহাদ করেছ, যুদ্ধ করেছ। মানুষ তোমাকে শহীদ বলেছে। তখন ফেরেস্তাদের বলবেন, হে ফেরেস্তারা, এ লোকটাকে চুলে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর, তাই করা হবে। দ্বিতীয় আরেকজন লোককে আনা হবে, যাকে ইলম দান করা হয়েছে এবং সে তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে। এবং কুরআন শরীফ সহীহ্-শুদ্ধভাবে পড়তে শিখেছে। আল্লাহ পাক তাকে বলবেন, হে আলেম বা ক্বারী সাহেব, তোমাকে এত ইলম দেয়া হয়েছিল, শুদ্ধ করে কুরআন শরীফ পাঠ করতে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, তুমি কি করলে? সে ব্যক্তি বলবে, আল্লাহ পাক, আমি আপনার জন্য ইলম শিক্ষা করেছি এবং তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছি, আর আপনার জন্যই আমি কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পাঠ করেছি। আল্লাহ পাক বলবেন, মিথ্যা কথা। বরং মানুষ তোমাকে বড় আলেম বা বড় ক্বারী সাহেব বলবে, সে জন্যেই তুমি ইলম অর্জন করেছ, কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে তিলাওয়াত করতে শিখেছ। কাজেই মানুষ তোমাকে বড় আলেম, বড় ক্বারী সাহেব বলেছে (তোমার বদলা তুমি পেয়েছ)। তখন আল্লাহ পাক ফেরেস্তাদেরকে বলবেন, হে ফেরেস্তারা, তোমরা এ লোকটাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। তখন তার চুল ধরে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তৃতীয় আরেক জনকে আনা হবে, যাকে অনেক সম্পদ দান করা হয়েছে। তাকে আল্লাহ পাক বলবেন, হে ব্যক্তি, তোমাকে আমি দুনিয়াতে অনেক সম্পদের মালিক করেছিলাম, তার বিণিময়ে তুমি কি আমল করলে? সে ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ পাক, আমি আপনার পছন্দণীয় এমন কোন পথ নেই, যে পথে দান-খয়রাত করিনি। অর্থাৎ আপনি যতগুলো রাস্তা পছন্দ করতেন॥ মস্জিদ, মাদ্রাসা, লঙ্গরখানা, এতিমখানা, গরীব॥মিস্কিন, রাস্তা॥ঘাট, পুল ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রেই আমি কম-বেশী দান করেছি। কোন প্রার্থীকে আমি খালিহাতে ফিরিয়ে দেইনি। সবাইকে কম-বেশী দান করেছি, একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহ পাক বলবেন, মিথ্যা কথা। তুমি এ জন্য করেছ যে, লোকে তোমাকে দানশীল বলবে, তোমাকে তা বলা হয়েছে। আল্লাহ পাক তখন বলবেন, হে ফেরেস্তারা, এ দানশীল ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে দাও। তখন ফেরেস্তারা তাকে চুলে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।” (মুসলিম শরীফ)

স্মরণীয় যে ইসলামে উনার কাজ বিশেষভাবে যাদের দ্বারা হয় তারা এই তিন শ্রেণীরই অন্তর্ভুক্ত।

কারণ জ্বিহাদকারী না হলে ইসলাম জারি রাখা, ইসলামে উনার প্রচার-প্রসার করা এবং ইসলামের শত্রুদের থেকে মুসলমানদের মান-ইজ্জত, আবরু-সম্মান ও সম্পদ ইত্যাদির হিফাযত করা দুরূহ হবে, আলেম না হলে ইল্ম উনার প্রচার-প্রসার হওয়া, মানুষের মাদ্রাসা, মক্তবে ও সাধারণভাবে দ্বীনের তা’লীম পাওয়া, মসজিদ পরিচালনা করা কঠিন হবে এবং দানশীল না থাকলে ইসলামের বহু কাজ যেমন, মসজিদ, মাদ্রাসা, লঙ্গরখানা ইয়াতীমখানা ইত্যাদি হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। অর্থাৎ ইসলামের প্রচার-প্রসারে উপরোক্ত তিন ব্যক্তির অবদান বিশেষভাবে কাম্য। কিন্তু অবদান থাকা সত্ত্বেও উপরোক্ত তিন ব্যক্তি যে কারণে নাযাত পেতে ব্যর্থ হবে তা হলো ইখ্লাছ।

অতএব প্রমাণিত হলো যে, ইখ্লাছ ব্যতীত দ্বীনের দাওয়াত, জ্বিহাদ, দান-খয়রাত ইত্যাদিসহ কোন ইবাদত বা আমলই আল্লাহ পাক উনার নিকট গৃহীত নয়। যদি গ্রহণযোগ্যই হতো, তাহলে হাদীছ শরীফে বর্ণিত তিন প্রকার লোক জাহান্নামী হতোনা।

এখানে উল্লেখ্য যে, উক্ত ইখ্লাছ অর্জনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে- ইলমে তাসাউফ। ইলমে তাসাউফ চর্চা বা হাসিল করা ব্যতীত ইখ্লাছ হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তাই শরীয়ত, ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ফরজে আইন করে দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
طلب العلم فريضة على كل مسلم وسلمة. অর্থ:- “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্যে ইলমঅর্জন করা ফরজ।” (ইবনে মাজা, বায়হাক্বী)

এ হাদীছশরীফ-উনার ব্যাখ্যায় আরো একখানা হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
العلم علمان علم فى القلب فذاك علم النافح وعلم على للسان فذا لك حجة الله عزوجل على ابن ادم.
অর্থ:- “ইলম দু’প্রকার। একটি হলো- ক্বালবী ইলম, যা উপকারী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাসাউফ। আর দ্বিতীয়টি হলো- জবানী ইলম, যা আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দার জন্যে দলীলস্বরূপ অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্।” (দারেমী, মিশকাত)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইলমে ফিক্বাহের সাথে সাথে ইলমে তাসাউফ অর্জন করাও ফরজে আইনের অন্তর্ভুক্ত। মুলতঃ ইলমে ফিক্বাহের দ্বারা বাহ্যিক আমল পরিশুদ্ধ হবে, আর ইলমে তাসাউফের দ্বারা আভ্যন্তরীণ অর্থাৎ ক্বাল্ব বা অন্তর পরিশুদ্ধ হবে অর্থাৎ ইখ্লাছ পয়দা হবে। বস্তুতঃ আহ্লে তাসাউফ বা অন্তর পরিশুদ্ধকারীগণ অর্থাৎ ইখ্লাছ অর্জনকারীগণই প্রকৃত পক্ষে কামিয়াব বা সফল। আর একমাত্র তাসাউফ চর্চা বা অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমেই প্রকৃত সফলতা অর্জন করা সম্ভব। তাই আল্লাহ পাক বলেন,
قد افلح من تزكى
অর্থ:- “সে ব্যক্তিই কামিয়াবী বা সফলতা অর্জন করেছে, যে ব্যক্তি তায্কিয়া বা পরিশুদ্ধতাঅর্জন করেছে।” (সূরা আ’লা/১৪) মহানআল্লাহ পাক অন্যত্র আরো ইরশাদ ফরমান, قد الفح من زكها وقد خاب من دسها.
অর্থ:- “সে ব্যক্তিই সফলতা অর্জন করেছে, যে ব্যক্তি তার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর যে ব্যক্তি তার অন্তরকে কুলষিত করেছে, সে বিফল হয়েছে।” (সূরা শামছ/৯-১০)

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ক্বাল্ব বা অন্তর পরিশুদ্ধ করা বা ইলমে তাসাউফ অর্জন করার মধ্যেই পূর্ণ কামিয়াবী বা সফলতা নিহিত রয়েছে, যা অন্য কোনভাবেই অর্জন করা সম্ভব নয়।

যিকরুল্লাহ হচ্ছে শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত থাকার সুরক্ষিত দুর্গ

অভিশপ্ত, লা’নতপ্রাপ্ত ইবলিস মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক অমান্য করার ফলে যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করে দিলেন, তখন শয়তান বললো-
قال فبعزتك لاغوينهم اجمعين. الا عبادك منهم المخلصين.
অর্থ: “সে (শয়তান) বললো, আপনার ইজ্জতের ক্বসম, অবশ্যই আমি তাদের সকলকে বিভ্রান্ত করবো। তাদের মধ্যে থেকে আপনার মুখলিছ বান্দাগণ ব্যতীত।” (পবিত্র সূরা ছোয়াদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২, ৮৩)

সেজন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, সমস্ত মানুষ, মু’মিন, আলিম, আমলকারীগণ ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র ইখলাছকারীগণ তথা মুখলিছ বান্দাগণ ব্যতীত।
মুখলিছ কারা? ইখলাছপ্রাপ্ত বান্দাগণকে মুখলিছ বলা হয়। আর ইখলাছ হচ্ছে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে ইবাদত-বন্দেগী করা।
ইখলাছ কিভাবে অর্জিত হবে? হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনার নিকট বায়াত গ্রহণ করে সবক নিয়ে রীতিমত ছোহবত ইখতিয়ার করে যিকির আযকার ঠিকমত করলেই ইখলাছ অর্জিত হবে।
অতএব, যিকরুল্লাহ উনার মাধ্যমেই শয়তানের সকল প্রকার ষড়যন্ত্র, ধোঁকা-প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। তাই শয়তান থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য খালিছভাবে যিকির করা ব্যতীত বিকল্প কোনো পথ নেই।

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রিয়াজত-মাশাক্কাত মুবারক

ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীকত, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিযামিয়া মাদরাসায় অধ্যয়নকালে বাগদাদ শরীফ উনার বিভিন্ন আউলিয়ায়ে কিরাম তথা পীর মাশায়িখগণের দরবার শরীফ-এ যাতায়াত করতেন। মাদরাসায় সম্মানিত ইলমে ফিকাহ তথা জাহিরী ইলিম হাছিলের পাশাপাশি সম্মানিত বাতিনী ইলিম তথা ইলমে তাছাউফ হাছিলের লক্ষ্যেই ছিল সেই যাতায়াত। তিনি অতি অল্প বয়সেই এই উপলব্ধির চরম স্তরে পৌঁছেছিলেন যে, শুধু ইলমে ফিক্বাহ তথা জাহিরী ইলিম দ্বারা কখনোই মঞ্জিলে মাকসুদে পৌঁছা তথা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত-মা’রিফাত হাছিল করা, তায়াল্লুক-নিসবত তথা নৈকট্য যা প্রধান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তাতে পৌঁছা কখনোই সম্ভব নয়।

উপরোন্তু ইলমে তাছাউফ ব্যতীত ইলমে ফিক্বাহ দ্বারা অনেকাংশে গুমরাহী বা পথভ্রষ্টতাই বৃদ্ধি পাবে। পরিশেষে ঈমানহারা হয়ে কবরে যাওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এটাও উপলব্ধি করেছিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ-নিষেধগুলো ভালোভাবে হৃদয়াঙ্গম করা এবং তা নিখুঁতভাবে পালন করা তথা হাক্বীক্বী ঈমানদার, হাক্বীক্বী মুসলমান হওয়ার জন্য ইলমে তাছাউফ হাছিল করা আবশ্যক।
তিনি নিযামিয়া মাদরাসা হতে সব বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভের পর পরেই বাগদাদ শরীফ উনার তৎকালীন তরীক্বতের বিশিষ্ট ইমাম, কামিল-মুকাম্মিল শায়েখ হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত মুবারকে বাইয়াত হন। উনার দরবার শরীফ-এ হাজির হয়ে তিনি উনার আদেশানুসারে যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতে আত্মনিয়োগ করেন। অতি অল্প সময়ে শায়েখ উনার খাছ ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ, দোয়া পেয়ে মা’রিফাত-মুহব্বতের অতি উঁচু স্তরে পৌঁছেন। তিনি স্বীয় শায়েখ হযরত আবূ সাঈদ মুবারক মাখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্দেশে কয়েক বৎসর উনার ছোহবতে থাকলেন। পরে উনার ইজাযত পেয়ে অন্যত্র চলে যান।
“আখবারুল আখইয়ার” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বাগদাদ শরীফ-এ অবস্থানকালের প্রসঙ্গে বলেছেন, আমি পঁচিশ বছর যাবৎ ইরাকের বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে-প্রান্তরে রিয়াজত-মাশাক্কাত তথা সাধনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছি। চল্লিশ বছর যাবৎ ইশার ওযু দিয়ে ফজরের নামায পড়েছি। আর পনেরো বছর যাবৎ ইশার পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত পর্যন্ত প্রত্যেক দিন একবার করে কুরআন শরীফ খতম করেছি। তিন দিন থেকে শুরু করে চল্লিশ দিন পর্যন্ত না খেয়ে একাদিক্রমে রোযা রেখেছি। তিনি আরো বর্ণনা করেছেন- ‘আমি প্রথম দিকেই নিজের শরীরকে একটি দড়ি দিয়ে বেঁধে এক প্রান্তের সাথে অন্য প্রান্তের খাটের সাথে বেঁধে নিতাম যাতে ঘুম এলে টান পড়ার সাথে সাথে ঘুম ভেঙে যায়। তারপর আমার মধ্যে জজবা বা অভ্যন্তরীণ প্রেরণা জাগ্রত হলে আমি জঙ্গলের দিকে বেড়িয়ে পড়তাম। দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে এদিকে-ওদিকে ঘুরতে থাকতাম। কখনো কখনো চিৎকার দিয়ে উঠতাম। প্রায়শই আমি বেহুঁশ ও নির্জীব হয়ে পড়ে থাকতাম। তিনি আরো বলেন, এক রাতে আমি নামাযের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার মনে আকাঙ্খা জাগলো যে, আমার একটু আরাম করে নামায পড়া উচিত। তা এজন্য যে, আমার শরীরের উপর আমার হক্ব রয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে গেলাম আর যে স্থানটিতে আমার মনে এই আকাঙ্খা জেগে উঠেছিল, ওখানেই এক পায়ে দাঁড়িয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করে খতম করলাম। যাতে আমার মনে এই আকাঙ্খা আর না জেগে উঠে।
একই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেছেন, ক্রমশঃ আমার সাধনার ধারা এর চেয়েও কঠোর করতে লাগলাম। প্রথম একটি বছর আমি বাগদাদ শরীফ থেকে পনের মাইল দূরবর্তী প্রাচীন মাদায়েন শহরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কাটালাম। তথায় বন্য ফল-মূল খেয়ে আমি জীবন ধারণ করেছিলাম। তখন আমি একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির-ফিকিরের মাধ্যমেই সময় অতিবাহিত করতাম।
আমি কয়েক বছর কারখের জনশূন্য প্রান্তরে কাটিয়েছি। সেখানে আমার খাদ্য ছিলো স্বাদহীন বন্যখেজুর। আর পরিধেয় বস্ত্র বলতে কেবল একটি পশমের তৈরি জামা। আমার প্রতি সহানুভূতিশীল একটি লোক এসময় বনজঙ্গল থেকে আমার জন্য ওই খাদ্য সরবরাহ করতো। এ সময় আমি চলা ফেরা করতাম পাদুকাহীনভাবে। পাদুকা আমার ছিলোও না। খালি পায়ে কণ্টকাকীর্ণ বন্য পথে চলে আমার দু’পায়ের তলায় চালনির মতো ছিদ্র হয়ে গিয়েছিলো। বয়সে তখন আমি পূর্ণ যুবক। এটা মানুষের রঙিন আশা-আকাঙ্খা ও আবেগ-উচ্ছ্বাসের সময়। জীবনের এ যুগ সন্ধিক্ষণেই মানুষ প্রধানতঃ কুপ্রবৃত্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে থাকে। কিন্তু আমি মহান আল্লাহ পাক উনার মেহেরবানীতে এরূপ যাবতীয় ভোগ-লালসার ঊর্ধ্বে ছিলাম। এমনকি কখনো আমার মনে সুস্বাদু খাবার গ্রহণ, সুন্দর পোশাক পরিধান বা উত্তম গৃহে জীবনযাপনের খেয়াল পর্যন্ত আসতো না। তাছাড়া পার্থিব যে কোনো ধরনের শান্তি, মান-মর্যাদা বা প্রভুত্ব, কর্তৃত্বের লালসা আমার অন্তরে জাগতো না। এগুলোর প্রতি আমি ছিলাম সবসময় উদাসীন। আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সাথেই নিমগ্ন থাকতো। আমার সমস্ত কামনা-বাসনা, চিন্তা-চেতনা ও কল্পনা মহাসত্তা মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে ছাড়া অন্য কোনো দিকে ধাবিত হতো না। আর যাতে আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মন-প্রাণ চিরকাল একই অবস্থায় থাকে, সেই তায়াল্লুক-নিসবতের যেন কোনো বিঘœ না ঘটে সে সাধনায় নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখতাম। পরবর্তী জীবনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার এই সাধনা কবুল করে হৃদয়ের বাসনা পূর্ণ করেছেন।
একবার সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল, মুহিউদ্দীন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুরীদদের একটি ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, “একদা আমি নির্জনে একাকী অবস্থান করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমার কাছে এসে বললেন, আমাকেও আপনার সাথে থাকার অনুমতি দান করুন। আমি বললাম, ঠিক আছে। ওই ব্যক্তি বললেন, একটি শর্তে যে, আপনি আমার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করবেন না। আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি কোনোমতেই আপনার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করব না। ওই ব্যক্তি বললেন, আচ্ছা, আপনি এখানেই অবস্থান করুন আমি এখনই আসছি, আর আমার না আসা পর্যন্ত আপনি কোথাও যাবেন না। একথা বলে তিনি গায়েব (অদৃশ্য) হয়ে গেলেন। এক বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি ফিরে আসলেন। আমি তখনও সেখানে অবস্থান করছিলাম। এক মুহূর্ত আমার নিকট বসে আবার দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনি এই স্থান ত্যাগ করবেন না। এ কথা বলে আবারও তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। আমি আবারও সেখানে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকিরে নিমগ্ন রইলাম। তৃতীয় বছরের মাথায় তিনি যখন ফিরে এলেন তখন উনার হাতে ছিল রুটি আর দুধের পেয়ালা। তিনি বললেন, আমি আব্বাস খিজির আলাইহিস সালাম। আমার উপর নির্দেশ এসেছে আপনার সাথে বসে পানাহার করার। তারপর আমরা দুজনে একসাথে বসে পানাহার করলাম। তারপর বললেন, বাগদাদ চলুন। অনন্তর আমরা দুজনে বাগদাদ শহরে চলে এলাম।” (নাফহাতুল উনস, হযরত বড়পীর ছাহিব উনার জীবনী মুবারক-১৪)
তিনি যখন উনার এ অবস্থার কথা উপস্থিত লোকদের সামনে বর্ণনা করছিলেন তখন কেউ জিজ্ঞাসা করল- এই তিন বছর আপনি কীভাবে ক্ষুধা নিবারণ করতেন? তিনি বললেন, বনের ঘাস ও পাতা খেয়ে ক্ষুধা কমিয়ে নিতাম।
‘তবাকাতে হানাবিল’-এ উল্লেখ আছে, একবার তিনি উনার এক মুরীদকে বললেন, রিয়াজত-মাশাক্কাত তথা সাধনায় আমার মনে হঠাৎ আকাঙ্খা জাগে যে, বাজার থেকে কিছু খাদ্যবস্তু কিনে আনি; কিন্তু আমি এদিক-ওদিক ঘুরতে থাকি। আরেক দিন আমার মনে ওই একই আকাঙ্খা জাগ্রত হলে হঠাৎ আমার সামনে গাছের একটি পাতা পড়লো। তাতে লেখা ছিল যে, ‘সুদৃঢ় ধর্ম বিশ্বাসীদের কোনো প্রবৃত্তি থাকে না; তা তো দুর্বল ঈমানদারদের মধ্যে সৃষ্ট হয়।’ তিনি বলেন- এই লেখা পাঠ করে আমি আমার অন্তর থেকে পানাহারের স্থূল প্রবৃত্তিকে বিদায় করে দিলাম। তিনি উনার পবিত্র যবানীতে আরও বর্ণনা করেছেন, একবার বাগদাদে দুর্ভিক্ষের কারণে লোকজন দলে দলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে। কয়েক দিন ধরে পানাহারের সামান্যতম সামগ্রীও আসত না। কেননা অন্য লোকেরা সেই বস্তুই খেতো যা আমি খেতাম। যখন আমি ঘাস বা পাতা খাওয়ার জন্য আকাঙ্খা করতাম তখন দেখতাম অন্য ফকীররাও তারই সন্ধানে গাছতলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি লজ্জিত ও বেদনাহত হয়ে ওই বস্তু তাদের জন্য ছেড়ে দিতাম আর নিজে অনাহারে থাকতাম। যেন ওই বছরগুলিতে ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য জঙ্গলের ঘাস ও গাছগুলির পাতায়ও টান পড়েছিল।
তিনি বাগদাদ শরীফ উনার এক গম্বুজে এগারো বছর যাবৎ ইবাদত ও রিয়াযত করেছেন। এরই কারণে লোকেরা উনারই স্মরণে এই গম্বুজের নাম রেখেছেন ‘বুরজে-আজমী’ বা আজমী গম্বুজ। যা আজও এই নামে স্মরণীয় হয়ে আছে। এই ইবাদতের সময়ে তিনি একবার এই মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন যে, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে গায়েবী বস্তু দিয়ে পানাহার করানো না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কিছুই খাব না।’ অতএব, চল্লিশ দিন পর্যন্ত গায়েব থেকে কোনো খাদ্য-পানীয় না আসায় তিনি কিছুই পানাহার করলেন না। চল্লিশ দিন পরে এক ব্যক্তি এসে রুটি ও আরো কিছু খাদ্যবস্তু দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। খাদ্যবস্তু দেখে উনার হৃদয়-মন তা খাওয়ার জন্য আকুল হয়ে উঠল; কিন্তু তিনি বললেন- ‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবো না।’ কিছুক্ষণ পরে শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এলেন এবং বললেন, ‘আবদুল কাদির! কী ব্যাপার? তিনি উত্তর দিলেন, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার সন্নিধান প্রাপ্তির জন্য আত্মা পাগলপারা হয়ে উঠেছে।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন- ‘আপনি আমার গৃহে চলে আসতে পারেন।’ আমি স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ হতে স্পষ্ট আদেশ না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করব না। তিনি এই সিদ্ধান্তেই অটল ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত খিযির আলাইহিস সালাম তিনি আগমন করলেন এবং বললেন- ‘আসুন আমার সাথে এবং হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে চলুন। তিনি রওনা হলেন। পৌঁছে দেখলেন, হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার জন্যই অপেক্ষা করছেন।’ উনাকে দেখে তিনি বললেন, ‘হে আবদুল কাদির! আমিই হযরত খিজির আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠিয়েছিলাম। পরিণামে হযরত খিযির আলাইহিস সালাম তিনি আপনাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন।’ তারপর হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে নিজের গৃহে নিয়ে গেলেন এবং নিজহাতে উনাকে পানাহার করালেন। এমনকি খুব সন্তুষ্ট হলেন। তারপর খিলাফতের সনদ প্রদান করলেন।

মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে…………

প্রসঙ্গ: ফানা ও বাক্বা

শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথে ফানা ও বাক্বা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। কারণ, পূর্ণ ফানা হতে না পারলে পূর্ণ বাক্বা লাভ করা যায় না।

স্মর্তব্য, মুরীদ নিজের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে যেরূপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সেরূপ সম্পর্কই প্রতিষ্ঠিত হবে।

কাজেই, নিজের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে গভীর সম্পর্ক, নিছবত, প্রতিষ্ঠার জন্য ফানা হতে হবে। গাইরুল্লাহর সর্বপ্রকার আকর্ষণ হতে ক্বলব (অন্তর) কে মুক্ত রাখতে হবে। দুনিয়ার কোন জিনিষের আশা বা আকর্ষণ মুরীদের অন্তরে থাকতে পারবে না।

সেই সাথে নফসের বদ খাছলত বা বদ স্বভাবগুলো থেকে নফসকে মুক্ত রাখতে হবে। সেগুলোর পূর্ণরূপে বিনাশ সাধন করতে হবে। তাহলে অতি সহজেই শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে।

فناء (ফানা) শব্দের অর্থ: ধ্বংস, বিনাস, লয়, শেষ, মৃত্যু। আর بقاء (বাক্বা) অর্থ হচ্ছে- অবশিষ্ট থাকা, টিকে থাকা, বাকি থাকা, স্থায়ী হওয়া। ছূফীয়ানে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেছেন-

ہستی کو مٹادو اگر کچھ مرتبہ چاہو.دانہ بخاک ملکر گل گلزار ہوتا ہیں.

অর্থ: æযদি কোন মর্যাদা-মর্তবা হাছিল করতে চাও তাহলে তোমার অস্তিত্বকে বিলীন করে দাও। কারণ, শস্য দানা মাটির সাথে মিশে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করার কারণে ফুলে ফলে সুশোভিত হয়।”

যুগে যুগে ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনার ফানা ও বাক্বা-এর উজ্জল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। যা আগত-অনাগত সকল লোকের জন্যই আদর্শরূপে বিরাজ করছে। ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীকত, সামছুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন খাজায়ে খাজেগাঁ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি সবসময় নির্জনে একাকী বসে গভীর মনোযোগের সাথে আল্লাহ তায়ালা উনার মুরাকাবা ও মুশাহাদা করতেন।

একদিন উনার কান মুবারকে হঠাৎ একটি আওয়াজ আসলো- æহে হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি! দুনিয়াবী সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে সবকিছুর আকর্ষণ হতে মুক্ত হয়ে একমাত্র আমারই চিন্তায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করার সময় কি এখনও হয়নি?

এ নেদা বা আওয়াজ শুনে হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিচলিত হলেন এবং উক্ত স্থান ত্যাগ করে রাতের অন্ধকারে শহরের বাইরে নদীর তীরে উপস্থিত হলেন। তিনি বলেন, æআমি নদীর নিকট উপস্থিত হয়ে আমার কাপড় ধুলাম এবং তওবার নিয়তে গোসল করলাম।

দুনিয়াবী সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতঃ সম্পূর্ণ ভগ্ন হৃদয়ে নিজেকে অত্যন্ত অসহায় চিন্তা করে আযিযী-ইনকিসারী তথা অত্যন্ত কাকুতি মিনতির সাথে দুই রাকায়াত নামায আদায় করলাম।

এরপর বহুদিন এ আশা করেছিলাম যে, পুনরায় ওইরূপ দুই রাকায়াত নামায আদায় করবো কিন্তু সেরূপ পরিবেশের সুযোগ আর কখনো হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, প্রথম জজবাতেই আমার প্রতি ইলহাম হয়েছিল যে, আপনি কিভাবে এই পথ ইখতিয়ার করতে চান?

আমি আরয করলাম, আমি যা চাই তাই যেন বাস্তবে পরিনত হয়। জাওয়াব আসলো, æনা, বরং আমি যা হুকুম করবো আপনাকে তাই করতে হবে।” আমি পুনরায় আরয করলাম, ইহা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি যা ভিক্ষা চাই তাই যদি হয়, তবেই হয়তো আমি এই পথে ইস্তিক্বামাত বা অবিচল থাকতে পারবো। দুবার এরূপ সুওয়াল-জাওয়াব হলো। তারপর পনের দিন পর্যন্ত আমি সিজদায় পরে থাকলাম। নামাযের সময় শুধু নামায আদায় করে পুনরায় সিজদায় যেতাম। আমার এরূপ বেকারার অবস্থা উত্তেরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগলো। আর এরই মধ্যে একদিন ইলহাম হলো- আপনার প্রার্থনা কবুল করা হলো। আপনি যা চান যেভাবে চান তা সেভাবেই দেয়া হবে। (হালাতে মাশায়িখে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দিদীয়া-২০৯)

উপরোল্লিখিত ঘটনায় প্রতিভাত হয় যে, দুনিয়ার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মাঝে পূর্ণ ফানা হয়েছিলেন। যে কারণে উনি খালিছ বাক্বাও লাভ করেছিলেন। এবং মহান আল্লাহ পাক তার পুরস্কার স্বরূপ উনার দোয়াও কবুল করেছেন। এবং ত্বরীকার ছবক নফস থেকে শুরু না করে ক্বলব থেকে শুরু করতে ইলহাম-ইলকা লাভ করেছেন। আগের মত রিয়াজত-মাশাক্কাত-এর পরিবর্তে সুন্নতের আমল শুরুতেই শুরু করার নির্দেশ পেয়েছিলেন।

আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে গভীর তায়াল্লুক, নিসবত প্রতিষ্ঠার জন্য ফানা হওয়া বা অস্তিত্বকে বিলীন করা আবশ্যক। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ তার অস্তিত্বকে ফানা বা বিলীন করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে পূর্ণতায় পৌঁছতে পারবে না। কাজেই, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট নিজের ব্যক্তিত্ব, অস্তিত্ব, প্রভাব, প্রতিপত্তি ইত্যাদি সবকিছুকে বিসর্জন দিতে হবে। নিজের ইচ্ছা বা ইরাদাকে বিলীন করতে হবে। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ইচ্ছাই হবে তার ইচ্ছা। কামনা-বাসনাও সেরূপ হতে হবে। তবেই কামিয়াবী লাভের আশা করা যায়।

আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, ক্বইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ফানা যে পরিমাণ হবে বাক্বাও সে পরিমাণ হবে । তিনি আরো বলেন, ক্বলবের ফানা ও নফসের ফানা এ পথের প্রথম ধাপ। গাইরুল্লার সর্বপ্রকার আকর্ষণ হতে ক্বলব বা অন্তঃকরণ মুক্ত হওয়াকে ক্বলবের ফানা বলে। আর সর্বপ্রকার বদ খাছলত হতে নফসকে মুক্ত রাখাকে নফসের ফানা বলে।

তিনি আরো বলেন, বিলায়েত বা ওলীত্ব ফানা এবং বাক্বাকেই বলা হয়ে থাকে। এটা হয়তো আম বা সাধারণ হবে নতুবা খাছ বা বিশিষ্ট হবে।

বিলায়েতে আম-এর অর্থ হচ্ছে, সাধারণ নৈকট্য। বেলায়েতে খাছ হচ্ছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলায়েত বা নৈকট্য। উক্ত বিলায়েতের মধ্যে ফানা (বিলীন) বাক্বা (স্থায়িত্ব) পূর্ণরূপে হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি এই উচ্চ নিয়ামত পেল ইবাদত-বন্দিগী, যিকির-ফিকির, রিয়াযত-মাশাক্কাতের জন্য তার শরহে ছুদূর বা অন্তর প্রসারিত হলো, নফস প্রশান্ত হলো। ফলে সে তার রব আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ পাক তিনিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। (মাকতুবাত শরীফ-১/২১৪)

তিনি আরো বলেন, আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্যের আকর্ষণ হতে ক্বলব বা অন্তঃকরণকে মুক্ত রাখা আমাদের সকলের কর্তব্য। এমনিভাবে মুক্ত রাখা আবশ্যক যে, অন্যের কোন কিছুর চিন্তাও যেন ক্বলবে প্রবেশ করতে না পারে। যদি কারো হায়াত হাজার বছর হয় তথাপি যেন তার অন্তরে অন্যের চিন্তা প্রবেশ করতে না পারে। যেহেতু তার অন্তঃকরণ আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্যকে পূর্ণরূপে ভুলে গিয়েছে। এটাই হচ্ছে মূল কাজ। আর অন্য সবই অনর্থক। (মাকতুবাত শরীফ ১/১৬১)

যে পর্যন্ত রোগী রোগ মুক্ত না হয়, সে পর্যন্ত কোন খাদ্যই তার জন্য উপকারী হয় না। বরং তা দ্বারা রোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। কাজেই, সর্বপ্রথম তার রোগ মুক্তির চেষ্টা করতে হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক শক্তি ফিরে আসে। একইভাবে মানুষের ক্বলব বা অন্তঃকরণ যখন ব্যাধিগ্রস্ত হয় তখন তার কোন ইবাদত-বন্দিগীই ফলপ্রসূ হয় না। বরং অনেক ক্ষেত্রে অপকারী হয়। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

رب صائم ليس له من صيامه الا الظماء ورب قائم ليس له من قيامه الا السهر

অর্থ: æঅনেক রোযাদার রয়েছে যারা রোযা দ্বারা ক্ষুধা-পিপাসা ব্যতীত কিছুই লাভ করতে পারে না। আর অনেক রাত জাগরণকারী রয়েছে, যারা রাত জাগরণের কষ্ট ব্যতীত কিছুই লাভ করতে পারে না।” (দারিমী, মিশকাত)

মাশায়িখে ইজাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তদ্রƒপ রোগমুক্তির নির্দেশ দেন। আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কারো সাথে তার মুহব্বত বা আকৃষ্টতা তা যেন নিজের সাথেই আকর্ষণ। কেননা যে কেউ যে কোন বস্তুর আকাঙ্খা করুক না কেন তা নিজের জন্যই হয়ে থাকে। সন্তান-সন্ততিগণকে ভালবাসে তাও নিজের জন্যেই ভালভাসে। একইভাবে ধন-সম্পদ, কর্তৃত্ব এবং মান-সম্মান ইত্যাদির ভালবাসাও অনুরূপ। কাজেই, প্রকৃতপক্ষে তার নফসের আকাঙ্খাই তার মা’বুদ বা উপাস্যতুল্য। যে পর্যন্ত উক্ত মুহব্বত হতে মুক্তি লাভ না হবে, সে পর্যন্ত তার কামিয়াবী লাভ হওয়া কঠিন। (মাকতুবাত শরীফ ১/১৮৬)

উপরোক্ত বক্তব্যসমূহের ব্যাখ্যা হলো আহাল ও ইয়াল আল-আওলাদ, মাল-সম্পদ, ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, মান-সম্মান ইত্যাদি যদি গাইরুল্লাহ হাছিলের উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা না কামিয়াবীর কারণ। আর যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবার লক্ষ্যে হয় অর্থাৎ আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে হয় তাহলে তা কামিয়াবীর কারণ।

মুনজিয়াত বা নেক খাছলত বা সৎ স্বভাব

মুনজিয়াত হলো ঐ সকল নেক খাছলত বা সৎ স্বভাব, যে সকল নেক খাছলত বা সৎ স্বভাব নাযাত বা মুক্তি দেয়। অর্থাৎ “তাযাল্লুক মায়াল্লাহ্” বা আল্লাহ্ পাক-এর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে দেয়।
কোন বুযুর্গ কবি বলেন, “যদি তুমি মহান আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য লাভ করতে চাও, তবে তোমার নফ্স বা অন্তরকে নেক খাছলতসমূহ দ্বারা তা’লীম দাও।”
আর ঐ সকল নেক খাছলত হচ্ছেঃ

Continue reading “মুনজিয়াত বা নেক খাছলত বা সৎ স্বভাব”

হক্কানী শায়েখ উনার কাছে বাইয়াত হওয়া ফরয

একজন হক্কানী শায়েখ তথা ওলী আল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে জিকির-ফিকির করে ইছলাহ হাছিল করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। নিচে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-কিয়াস এর দৃষ্টিতে আলোচনা করা হলোঃ 
১। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ইমহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটে।” (সূরা আ’রাফঃ আয়াত শরীফ ৫৬)
২। কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,“আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, সে কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল শায়খ বা পীর) উনার ছোহবত লাভ করতে পারে না।” (সূরা কাহাফঃআয়াত শরীফ-১৭)
৩। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরানঃ আয়াত শরীফ-৭৯)
৪। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবংছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও।” (সূরা তওবাঃ আয়াত শরীফ-১১৯)  এখানে ছাদিক্বীন বলতে ওলী-আল্লাহ উনাকেরকেই বুঝানো হয়েছে।
৫। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ আরো ইরশাদ করেন, “মহানআল্লাহ পাক  ও উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্বায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা (উলিল আমর) আদেশদাতা, উনাদেরকে অনুসরণ কর”।
৬। মহান আল্লাহ পাক তিনি  ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমাকে পাওয়ার জন্য উসিলা তালাশ কর”। ৭। পবিত্র কুরআন শরীফ আরো উল্লেখ রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি  ইরশাদ করেন, “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় উনাদের রবকে ডাকে উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক, উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বলবী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহ্বত (সাক্ষাত) এখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (সূরা কাহাফঃ আয়াত শরীফ- ২৮)
৮। হাদীস শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আদম সন্তানের শরীরে এক টুকরা গোশতআছে যদি সেটা শুদ্ধ হয়ে যায় তবে সমস্ত শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। আর যদি সেটা অশুদ্ধ হয় তাহলে সমস্ত শরীর বরবাদ হয়ে যায়, সাবধান ওটা হচ্ছে ক্বলব”। (বুখারী শরীফ)
৯। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ”।
১০। মহান আল্লাহ পাক তিনি  কুরআন শরীফ-এ বলেন, “সাবধান! মহানআল্লাহ পাক উনার যিকির দ্বারা দিল ইতমিনান হয়”। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবের উপর বসে, যখন আল্লাহ পাক উনারযিকির করে তখন পালিয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান ওসওয়াসা দেয়”।
১১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (জরুরত আন্দাজ) ইলম অর্জন করা ফরয।” (বায়হাক্বী, মিশকাত,মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত)
১২। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইলম দু’প্রকার- (১) ক্বলবী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইলম। (২) যবানী ইলম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল।” (দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত,শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব) সকলেই একমত যে, ইলমে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বলব হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বিলায়েতে আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা,যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদ, উনার নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।
১৩। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারী” তে উল্লেখ আছে যে,“যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, উক্ত ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয”।
১৪। হানাফী মায্হাবের মশহুর ফিক্বাহর কিতাব “দুররুল মুখতার”  এ উল্লেখ আছে, “যে আমল ব্যতীত কোন ফরয পূর্ণ হয়না; উক্ত ফরয পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাটাও ফরয”। Continue reading “হক্কানী শায়েখ উনার কাছে বাইয়াত হওয়া ফরয”